তিন বছরের জন্য সুদ স্থগিত নিয়ে কেন্দ্রের উপরে চাপ উত্তরোত্তর বাড়িয়েই চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যেই গত কাল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূলের সাংসদরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশা নিয়ে একটি লিখিত রিপোর্ট চেয়েছেন। ঠিক হয়েছে, মমতার সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা। তার পর আগামী সোমবার সেই রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। যাতে আগামী শুক্রবার মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগেই তাঁকে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে লিখিত ভাবে অবগত করা সম্ভব হয়।
মমতা কেন্দ্রকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাম আমলের ঋণের দায় তিনি নেবেন না। বস্তুত, এই বিষয়টি নিয়ে বহু বার তিনি সরব হয়েছেন। এ বার দলীয় সাংসদের প্রতি তাঁর নির্দেশ ছিল, সরকারের মধ্যে থেকে চাপ তৈরি করুন। তাঁর নিজের কথায়, ঢক্কানিনাদ না করে চাপটা বাড়িয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী তিনি। সেই লক্ষ্যেই ‘চরমসীমা’ দিয়েছেন। তার মধ্যে ‘ন্যায়’ না পেলে দিল্লি গিয়ে তাঁর দলের সাংসদদের সঙ্গে বিধায়করাও ‘আন্দোলনে’ যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা। দু’দিন ধরে সরকারের শীর্ষস্থানীয় দুই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বৈঠক করে সেই চাপের আবহটা তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন তৃণমূল সাংসদরা। এ দিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে ‘বিশদে’ এবং ‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে’ একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন।
বৈঠকের পর সৌগত রায় বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে যা যা করা সম্ভব, রাজ্যের জন্য করবে কেন্দ্র।” সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কাল বৈঠকে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তৃণমূলের দাবিদাওয়া তো বিবেচনা করা হবেই। তা ছাড়া তৃণমূল
নেতারা যদি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন তবে তিনি চলতি ব্যবস্থার মধ্যে আয় বাড়ানোর কিছু পথও বাতলে দেবেন। প্রণববাবুর এই বক্তব্যকেও ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল সাংসদরা।
আজকের আলোচনায় তাঁরা আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের সমস্যাগুলির কথা বিশদে তুলে ধরেন। বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, সৌগত রায় প্রমুখ জানান, গত ৩৪ বছরে সিপিএম যে অসুখ তৈরি করে গিয়েছে, তার দায় নতুন সরকার নিতে অক্ষম। এখন মানুষের আশা পূরণ করতে যে অর্থ প্রয়োজন, তা রাজ্যের হাতে তো নেই-ই, বরং যা আয় তার সবই চলে যাচ্ছে ঋণ আর সুদ মেটাতে। গোটা বিষয়টি ঢেলে সাজার সময় এসেছে। সৌগত রায় জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কী ভাবে সমাধান সূত্র বের করা যায়, তা নিয়ে তিনি শীঘ্রই প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। তৃণমূল সাংসদরা মনে করেন, মমতা দিল্লি আসার আগে রাজনৈতিক চাপ তৈরির কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করা গিয়েছে। সুদীপবাবুর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের সমস্যার ব্যাপারে কেন্দ্র এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের মূলত দু’টি দাবি ছিল এ দিন। এক, রাজ্যের ঋণের উপর দেয় সুদ তিন বছরের জন্য স্থগিত রাখা হোক। দুই, পুরো ঋণটাই ঢেলে সাজা হোক। যার মধ্যে ঋণ মকুব, সুদের হার কমানো, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি এই সব কিছুই পড়ে। সম্প্রতি রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রক থেকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল, ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কেন্দ্রের বিবেচনাধীন। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজ্যকে একাধিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ওই লিখিত জবাব কলকাতায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। অমিত মিত্র সেটি দেখে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য নতুন করে যুক্তিগুলি সাজিয়েছেন। |