পুলিশের মোটরবাইকে চেপে বর এলেন ছাদনাতলায়
শেষ রাতে বরকে তুলে নিয়ে এল পুলিশ। যেন চোর। বর তখন উদাস বসে এক খোলা মাঠে। সঙ্গে জনা চল্লিশ অভুক্ত বরযাত্রী। এবং কোটি কোটি রক্তপায়ী মশা।
পুলিশ অকস্মাৎ মোটরবাইক নিয়ে সেখানে হাজির। এক পুলিশকর্মী বললেন, “বর কে?” ঝাড়খণ্ডের পটমদা থানার বুড়িবাসা গ্রামের সঞ্জয় দাস বললেন, “আজ্ঞে, আমি।” পুলিশকর্মী বললেন, “ও আপনি। সোজা বাইকের পিছনে বসুন।” কিন্তু ওখানে যে...। মিহি সুরে কেউ একটা মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু পুলিশের ধমক শুনে সবাই চুপ। বরকে নিয়ে পুলিশ এল পুরুলিয়ার বরাবাজারের উপরপাড়ায়। সঙ্গে বরের বাবা, পুরুতমশাই ও বরের এক বন্ধু। সেখানেই ছাদনাতলা। পাত্রী বিজয়দাস মোহন্তের মেয়ে রিনা। তাঁর সাজগোজ তখন লটরপটর করছে। চোখের কোণে শুকনো জল। বিয়েটা বৃহস্পতিবার রাতেই হল। তখন অবশ্য লগ্ন শেষ।
কিন্তু বর বাবাজি গালে হাত দিয়ে মাঠে ছিলেন কেন? কী এমন দুঃখু?
বর ও বরযাত্রীরা ছিলেন আনন্দেই। দু’টি ট্রেকার ভাড়া করে আসছিলেন বুড়িবাসা গ্রাম থেকে। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি।
অলঙ্করণ : সুমন চৌধুরী
কনের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সবাই নেমে পড়লেন ট্রেকার থেকে। শুরু হল শোভাযাত্রা। ব্যান্ড বাজছে ঢ্যানা ঢ্যানা ঢ্যাং। আতসবাজি উড়ছে। পুড়ছে পটকা। ইতিউতি সুগন্ধী। বরযাত্রীর কী রোশনাই! কেউই খেয়াল করেননি, পটকা উড়ে গিয়ে কোথায় পড়ছে। একটি বা দু’টি পটকা পড়ল বিজয়দাসবাবুর পড়শি ভরত সিংহ মোদকের খড়ের ঘরে। ভরতবাবু প্রাক্তন শিক্ষক। তাঁর ছয়-ছয়টি খড়ের ঘর। পটকার আগুনে দাউদাউ জ্বলে গেল ছ’টি ঘরই। আগুন নেভাতে ছুটে গেলেন বরের বাবা তরণী দাস। বরযাত্রীরাও হাত লাগালেন। হাজার হোক, নতুন কুটুমের পড়শির চালা পুড়ছে। বসে তো থাকা যায় না। চারদিকে হইচই হট্টগোল। দমকলও এল। তরণীবাবু বললেন, “হঠাৎ জনা কয়েক যুবক আমাদের শাসাতে শুরু করল। বলল, ‘আপনাদের জন্যই আগুন লেগেছে। আপনারাই সেই আগুন নেভাতে এসেছেন। ইয়ার্কি হচ্ছে?’ দু’-একজন গায়ে ধাক্কা দিল। কেউ বলল আমাদের বেঁধে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। আমরা সরে পড়ি।”
কিন্তু কোথায় সরে পড়লেন?
রাত তিনটে নাগাদ যখন আগুন নিভল তখন বর বা বরযাত্রী কেউই নেই। বিজয়দাসবাবু বেজায় ফাঁপরে পড়লেন। তিনি উচ্চ স্বরে কাঁদতে বাকি রাখলেন। অকুস্থলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা নাসিম খান। তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, “যে করেই হোক, বরকে খুঁজে এনে দিন।”
কিন্তু বললেই তো হল না! বর গেলেন কোথায়? বরাবাজার থানায় রাতে দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর অলোক চট্টরাজ। তিনি যোগাযোগ করলেন কনের বাড়িতে। সেখানে ক্রন্দনরত কুটুমেরা জানালেন, বর বাড়ি চলে গেছে। বিয়েটা আর হবে না। বরের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা সুবিধার নয়। মাওবাদীদের ঘাঁটি। আগে নাশকতাও হয়েছে। তা ছাড়া বুড়িবাসা গ্রাম ঝাড়খণ্ড পুলিশের আওতায়। সাত-পাঁচ ভেবে দু’টি মোটরবাইকে রওনা দিলেন দুই পুলিশকর্মী। পনেরো কিলোমিটার দূরে বেড়াদা গ্রামে দেখা মিলল বরযাত্রীদের। কপাল ভাল, বেড়াদা গ্রাম পশ্চিমবঙ্গেই।
কিন্তু নিশীথ রাতে ওই তেপান্তরের মাঠে কেন? খিদেয় না বিরহে? বরযাত্রীদের দু’টি ট্রেকার ছিল। একটি যায় খারাপ হয়ে। ফলে, কেউই আর বাড়ি যাননি। মাঠেই বসে ছিলেন। আর দেড় কিলোমিটার দূরেই ঝাড়খণ্ড। বরযাত্রীর ট্রেকার সেখানে খারাপ হলে কী যে হত কে জানে!
পালালেন কেন? বর সঞ্জয় বললেন, “বেঁধে পেটানোর হুমকি দিচ্ছিল যে! তাই সরে পড়ি।” কনের কথা মনে পড়েনি? সঞ্জয়ের জবাব, “পড়েনি আবার! খুব পড়ছিল। তাই তো মাঠে বসে ছিলাম।”
কী কাণ্ড!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.