দিল্লি বনাম মুম্বই? না পুণে বনাম মুম্বই?
ডেকান চার্জার্সের কাছে হারের পরের দিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ‘হোম’-এ দাঁড়িয়ে বোঝার উপায় নেই। পাবে, রেস্তোরাঁয়, শপিং মলে সহবাগদের প্রত্যেকটা বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি যে রকম হাততালি পেল, অভিনব! দেখতে দেখতে বেশ অবাকই লাগছিল। ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে বরাবর মুম্বইকে সমর্থন করে এসেছে পুণে। কিন্তু তখন তাঁদের নিজেদের টিম ছিল না। নিজেদের শহরকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল না।
এখন হয়েছে এবং ডেকানের কাছে হারের শোকের মধ্যেও সেই স্বপ্ন পুরোপুরি খানখান হয়ে যায়নি। সহবাগরা দিন তিনেক আগেই পুণেকে পুণের মাঠে দুমড়ে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ দিন তাঁদের সমর্থনের পিছনে খুব সহজ অঙ্ক। যে অঙ্ক পুণের জনতার মতো তাঁদের ক্রিকেটারদের মুখে মুখেও ঘুরতে দেখলাম। শেষ চারের দৌড়ে পুণের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যারা উদয় হতে যাচ্ছ তাদের মধ্যে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স থাকবেই। নাইট রাইডার্স আর একটা সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ। অতএব শক্তিশালী দিল্লিকে দিয়ে এদের যত পারো মারো।
পয়েন্ট টেবিলের তলায় পড়ে থাকা ডেকানের হাতে বিস্ময়কর ভাবে হারতে না হলে হয়তো এমন তীর্থের কাক হয়ে অন্য ম্যাচের ফলাফলের জন্য বসে থাকতে হত না। আইপিএলে শিবাজির ঘোড়ার মতোই এ বার টগবগ করে ছুটতে শুরু করেছিল পুণে ওয়ারিয়র্স। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট-মস্তিষ্ক। অশোক দিন্দার আগুনে বোলিং। জেসি রাইডার আর স্টিভ স্মিথের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং। মুম্বইকে মুম্বইতে হারিয়ে রোমহর্ষক শুরু। ধোনির চেন্নাইকে ঘরের মাঠে হারানো। সব মিলিয়ে একটা আশার বলয় তৈরি হয়ে যায়।
পুণের ক্রিকেট বলতে এত কাল লোকে জানত প্রফেসর ডি বি দেওধর, চাঁদু বোড়ে এবং হেমন্ত কানিতকর। চলতি আইপিএলে পুণে ওয়ারিয়র্সকে কেন্দ্র করে যে রকম আকর্ষণ তৈরি হয়েছে তা হালফিলে মহারাষ্ট্র রঞ্জি টিমকে ঘিরেও হয়নি। দেখেশুনে মনে হচ্ছে সৌরভ শুধু কলকাতাকেই বিভক্ত করে দেননি। পুণেকেও ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্রে বসিয়ে দিতে পেরেছেন আবেগের ক্রিকেট শহর হিসেবে।
জনতার আবেগে ঘাটতি নেই। কিন্তু টিম নিয়ে নানা ময়নাতদন্ত জরুরি হয়ে পড়ছে। যেমন বিদেশি প্লেয়ার নির্বাচন এবং টিমের ব্যাটিং অর্ডার। এ দিন স্টিভ স্মিথ হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, তিনি অবশ্যই চান আর একটু উপরের দিকে ব্যাট করতে। আরও বেশি বল যাতে পাওয়া যায়। “রোজ রোজ নেমেই প্রথম বলে কারও পক্ষে ছয় মারা সম্ভব নয়। রোজ ১০ বলে ২৫ করে আসা সম্ভব নয়,” বললেন স্মিথ।
গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে হোটেলের লবিতে ঘুরে বেড়ানো। সারাক্ষণ ছটফটে একটা ভাব। মাঠে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি। সব মিলিয়ে স্মিথ একটা চরিত্র। টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘অকেশনাল ক্রিকেটার!’ এটা কি তাঁরই টুইটার অ্যাকাউন্ট? স্মিথ অবাক করে দিলেন, “হ্যাঁ, আমারই। ঠিকই তো লিখেছি। আমি তো এদিক-ওদিক টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়াচ্ছি। মাঝেসাঝে খেলি, এ ছাড়া আর কী?” তার পরেই দ্রুত যোগ করছেন, “আইপিএলে খেলতে খেলতে এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে, আমিও ফুলটাইম ক্রিকেটার। এ বার হয়তো টুইটারের লেখাটা পাল্টাতে হবে।”
হালচাল দেখে মনে হচ্ছে, কটকে ১ মে-র ম্যাচে তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তোলা হতেও পারে। সৌরভ এ দিন সকালে দু’দিনের ছুটিতে চলে গিয়েছেন কলকাতা। সোজা টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন কটকে। মনে হয় স্যামুয়েলসকে নিয়ে তাঁরও এ বার মোহভঙ্গ শুরু হয়েছে। পুণের কর্তারা মাইকেল ক্লার্কের আসার অপেক্ষায়। ক্লার্ক যোগ দিচ্ছেন কটকে। কিন্তু তিনি আসবেন প্রায় দেড় দিনের দীর্ঘ বিমান যাত্রা করে। জেটল্যাগ কাটিয়ে কটকে তাঁর নামা অনিশ্চিত।
পুণের জনতার মতোই পুণের ক্রিকেটারদের এ দিন দেখলাম সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করছেন। দিন্দাকে নিয়ে যাওয়া হল ডাক্তারের কাছে। বোঝাই যাচ্ছে তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। মুরলী কার্তিক কখনও খেলছেন, কখনও ডাগ-আউটে বসছেন। কিন্তু কোনও অভিযোগ নেই। এ দিন বললেন, “আমি কোনও দিনই টানা খেলার বরাত পাইনি। অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু এ বারে পুণে টিমটায় অনেক বেশি জেদ আর স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। সেই দলগত স্বপ্ন সফল করার জন্য যদি বাইরে বসতে হয় তা-ও ঠিক আছে।”
মুরলীর মতো পুণের অনেক ক্রিকেটারই বলছেন, সাতটা ম্যাচের মধ্যে চার বা পাঁচটা ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল যাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে অনেকগুলো কঠিন ম্যাচ যেখানে খেলা হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই মনে হচ্ছে, দিন্দা কবে ফিট হবেন কেউ জানে না। রাইডার হঠাৎ করে ব্যর্থ হতে শুরু করেছেন। এর উপর আশিস নেহরার বোলিং আছে। পুণের আইপিএলে স্বপ্নভঙ্গ করতে লাগবে তো শুধু তাঁর একটা জঘন্য ওভার!
|
বীরু-ঝড়ে উড়ে গেল মুম্বই
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
কোটলায় ঘরের মাঠে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সদের পেয়ে এ দিন দুরমুশ করল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। সহবাগ (৩৯ বলে ৭৩), জয়বর্ধনে (৫৫), পিটারসেন (২৬ বলে ৫০ নটআউট)--প্রথম তিনের ব্যাটিং-বিক্রমে দিল্লি ২০৭-৫ তোলে। ম্যাচের ললাটলিখন লেমন-ব্রেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সচিন-মালিঙ্গা-ব্লিজার্ড, পুরো শক্তির মুম্বই ১০.৪ আস্কিংরেট তাড়া করতে নেমে শেষ হয়ে গেল ১৭০-৯। সচিন (৭), রোহিত শর্মা (১২)-রা প্রথম চার ওভারের মধ্যে ফেরায় মুম্বইকে ১৯-৩-এর অথৈ জলে পড়ে। রায়াডু (৬২) লড়লেও দল আর স্বস্তির ডাঙায় উঠতে পারেনি। যে ম্যাচের আগে সহবাগ টুইট করেন, ‘রাজ্যসভার সদস্যের বিরুদ্ধে আইপিএলে প্রথম খেলব’, সেই ম্যাচে সহবাগের দিল্লি চলতি আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান (২০ ওভারে ২০৭-৫) তোলে। টুর্নামেন্টে তাদের আট ম্যাচে প্রথম বার আগে ব্যাটিং করে। |