রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য রূপে ক্রিকেটার সচিন তেণ্ডুলকর ও প্রাক্তন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রেখা গণেশনের নিয়োগ চমকপ্রদ, যদিও অভূতপূর্ব কিংবা নজিরহীন নয়। ইতিপূর্বে নার্গিস, বৈজয়ন্তীমালা, লতা মঙ্গেশকর প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে রাজ্যসভার মনোনীত পদে বরণ করা হইয়াছিল। সচিন কিংবা রেখা রাজ্যসভায় তাঁহাদের পূর্বসূরিদের অনেকের তুলনায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে কম কৃতবিদ্য নহেন। তাই সরকারি নীতির ধারাবাহিকতার বিচারে তাঁহাদের নিয়োগ-প্রস্তাবে তত কিছু চমকও নাই। প্রশ্ন হইল, ইহাতে কি তাঁহাদের মর্যাদা বাড়িবে, না রাজ্যসভার গৌরব? সচিন তেণ্ডুলকর ক্রীড়াঙ্গন হইতে যে সর্বভারতীয় লোকপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছেন, কোনও ভারতীয় রাজনীতিক তাহার ধারে-কাছে আসেন নাই। অভিনেত্রী রেখা সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য, যদিও তিনি রুপালি পর্দা হইতে বহুলাংশেই অবসৃত।
কিন্তু প্রশ্ন এই ব্যক্তিগণের প্রতিভা লইয়া নহে। প্রশ্ন একটিই: রাজ্যসভায় তাঁহারা কী করিবেন? রাজ্যসভা তো সংসদের উচ্চতর কক্ষ, যেখানে জনস্বার্থবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চাঙ্গের রাজনৈতিক আলোচনা ও বিতর্ক হইবার কথা। একই সঙ্গে, রাজ্যসভার কাজ হইল যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্রে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করা। সেই উদ্দেশ্যগুলিকে সচিন কিংবা রেখা কী ভাবে সমৃদ্ধ করিবেন, বোঝা দুষ্কর। তাঁহাদের পূর্বসূরিরা কেমন ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন, দেশবাসীর কি সে কথা স্মরণে আছে? না-থাকারই কথা। তাঁহাদের অনেকেই অধিকাংশ দিন অধিবেশনে হাজির থাকিতেন না, সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কেও তাঁহাদের আগ্রহ বা উৎসাহের প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। সচিন কিংবা রেখার ক্ষেত্রেও কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হইবে না? তাঁহারা যে-সব বিষয়ে কথা বলার অধিকারী, সেই ক্রিকেট-নৈপুণ্য কিংবা অভিনয়শিল্প কি অতঃপর রাজ্যসভার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত হইবে? বস্তুত, এমনকী এই সব ‘নিজস্ব’ বিষয়েও তাঁহাদের যুক্তিপূর্ণ আলোচনার দক্ষতা কি আদৌ প্রমাণিত? জনপ্রিয় অভিনেত্রী হইলেই অভিনয় বিষয়ে সমৃদ্ধ আলোচনার দক্ষতা জন্মায় না, ভাল খেলোয়াড় ‘ক্রীড়াবিদ’ না-ই হইতে পারেন।
তবে কি রাজ্যসভার জৌলুস বৃদ্ধির জন্যই এই তারকা সন্নিবেশ? সংসদের উভয় কক্ষেই নির্বাচিত সাংসদরা অনেকেই বিশেষ হাজিরা দেন না। সচিন কিংবা রেখার জৌলুস কি তাঁহাদের সভা-মুখী করিতেই? সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠিবে, রাজ্যসভা কি তবে একটি বিনোদনের জায়গা, যেখানে ভিড় বাড়াইতে নর্তক-খেলোয়াড়-জাদুকরদের ভাড়া করিয়া আনা দরকার? সন্দেহ হয়, জনপ্রিয় ‘তারকা’দের রাজ্যসভায় মনোনীত করার উদ্দেশ্য সম্ভবত কংগ্রেসের ক্ষীয়মাণ জনপ্রিয়তার কিছুটা পুনরুদ্ধার। সনিয়া গাঁধী মনমোহন সিংহরা হয়তো তারার আলোয় আলোকিত হইতে চাহেন। আলো হয়তো পাইবেন, ভোট পাইবেন কি? ভোটদাতারা কি এতই অপরিণতমস্তিষ্ক? তেন্ডুলকর বা রেখার জৌলুস তাঁহাদের চোখ এমনই ধাঁধাইয়া দিবে যে, তাঁহারা ভুলিয়া কংগ্রেস দলের ইউপিএ পরিচালনার ব্যর্থতা ক্ষমা করিয়া দিবেন। |