গিনেস রেকর্ডের শংসাপত্র হাতে ঘরে ফিরলেন অসমের মেয়ে সোনালি আচার্য। রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনে হাইলাকান্দি জেলার মেয়ে অধুনা অন্ধ্রের গৃহিণী সোনালী টানা ২৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট নেচেছেন। মঞ্চে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১২৫ জন নৃত্যশিল্পী। ফেব্রুয়ারি মাসে এই অনুষ্ঠানের পুরো তথ্য-ভিডিও পাড়ি দেয় লন্ডন। সম্প্রতি দীর্ঘতম রবীন্দ্রনৃত্যের স্বীকৃতি হিসাবে সোনালিকে শংসাপত্র পাঠিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ। শংসাপত্র নিয়ে জন্মভূমিতে এসে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের আশার্বাদ নিলেন তিনি।
৫ বছর বয়স থেকে নাচে হাতেখড়ি সোনালির। বিশ্বভারতীর অধীনে রবীন্দ্রনৃত্যে এমএ করার পাশাপাশি কটকে প্রয়াত গুরু রঘুনাথ দত্তর গুরুকুলে থেকে ওড়িশি শিখেছেন তিনি। গোটা দেশে ৫০০টি মঞ্চানুষ্ঠান ও দূরদর্শনে ৭৫ বার নৃত্য পরিবেশন করা সোনালি অসমে নৃত্যচার্য ও চেন্নাইয়ে প্রতিভা পুরস্কার পেয়েছেন। |
রবীন্দ্রনাথের ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে একটু অন্য রকম কিছু করতে চেয়েছিলেন সোনালি। হায়দরাবাদে তাঁর নিজস্ব নৃত্যশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। প্রথম চ্যলেঞ্জ ছিল, সঙ্গত করার মতো নৃত্যশিল্পী জোগাড় করা। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষয়িত্রীর পরিকল্পনার কথা শুনে সোৎসাহে রাজি। উৎসাহ দেন স্বামী জিএসভিভি সত্যনারায়ণ-সহ পরিবারের সবাই। তবে গিনেস কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করা, দেশ ও বিদেশের রবীন্দ্র অনুরাগীদের ডেকে পাঠানো, ১২৫ জন নর্তকীকে নিয়ে নাচার জন্য মোট ব্যয় বরাদ্দ দাঁড়ায় ৩০ লক্ষ। সোনালি বলেন, “সরকারি দফতরের দরজায়-দরজায় ঘুরেছি। আশ্বাস পেয়েছি, অর্থ পাইনি। একা এতবড় অনুষ্ঠানের ভার নিয়ে তখন নাস্তানাবুদ দশা। রাতে ৮টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা অবধি হত নৃত্যানুশীলন। এরপর ২ ঘণ্টা ঘুম। ফের দৌড়। বারবার ভেঙে পড়েছি। তবে, স্বামী ও পরিবারের উৎসাহে আমার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসিনি।”
ফেব্রুয়ারির গোড়ায় দু’দিন তাঁর নিজের সংগঠন, অন্ধ্র সরকার, সাউথ জোন কালচারাল সেন্টার-তাঞ্জোর ও নাগপুরের সাউথ-সেন্ট্রাল জোন কালচারাল সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে হায়দরাবাদের রবীন্দ্রভারতীতে আয়োজিত হয় ‘রবীন্দ্র নৃত্যোৎসব-২০১২’। দুই দিন ধরে টানা নাচ চলে। মঞ্চস্থ হয় নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা, শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা, ভানুসিংহের পদাবলীর নৃত্যরূপ । এর পর, দেড়শো বছরের স্মরণে রবীন্দ্রনাথের দেড়শোটি গানের সঙ্গে নৃত্য। সোনালির সঙ্গে নাচে অংশ নেন অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশের নৃত্যশিল্পীরা। কেবল দেশ নয়, ফ্রান্সের অ্যাঞ্জেলা সোফিয়া স্ট্র্যাগার, জার্মানির সুজিক ও ডাইকি, জাপানের হিমু, বাংলাদেশের পূজা সেনগুপ্ত, শ্রীলঙ্কার বুদ্ধিকা এদ্রিসংগা, চণ্ডিণী, কস্তুরী, আরাচি সোনালিকে সঙ্গত করেন। সোনালি বলেন, “টানা ২৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, ১২৫ জনকে নিয়ে নাচের অনুষ্ঠান করা যে কত কঠিন ব্যাপার, তা বলে বোঝানো যাবে না। |