বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করল রাজ্য তথ্য কমিশন। জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট এবং তথ্য কমিশনারের নির্দেশ সত্ত্বেও চাকরি প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে তথ্য না দেওয়াতেই এই নির্দেশ।
রাজ্য তথ্য কমিশনার কে জন কোশি সম্প্রতি এক নির্দেশে জানিয়েছেন, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের সভাপতিকে প্রতি মাসের সাত তারিখের মধ্যে ট্রেজারিতে ৫০০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। শিক্ষা সংসদের সভাপতি স্বপনকুমার ঘোষ এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য ২০০৬ সালে বিজ্ঞপ্তি বের করে বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সেই পরীক্ষা হয় ২০০৯ সালে। ফল বেরোয় ২০১০-এর ২৫ জানুয়ারি।
তথ্য জানার অধিকার আইনে ওই বছরেরই ১৩ মার্চ কেতুগ্রাম থানার আমগোড়িয়ার বাসিন্দা উত্তমকুমার রায় জেলা সংসদ সভাপতির কাছে কিছু প্রশ্ন রেখে আবেদন করেন। আইন অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর না পেয়ে ফের ওই বছরের ১৩ এপ্রিল আবেদন করেন উত্তমবাবু। সর্বনিম্ন কত নম্বর পাওয়া চাকরি প্রার্থী সাধারণ বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তা জানতে চেয়েছিলেন উত্তমবাবু। এ ছাড়াও তিনি নিজের উত্তরপত্র দেখতে চেয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন সাধারণ বিভাগে যোগ্যতা অর্জনকারী ৪৮০ জনের নম্বর। কিন্তু কোনও জবাবই পাননি তিনি।
এর পরে ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন উত্তমবাবু। পরের বছর ২১ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার জেলা সংসদ সভাপতিকে নির্দেশ দেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত তথ্য উত্তমবাবুকে দিতে হবে। অগস্ট মাসে রাজ্য তথ্য কমিশনকে চিঠি দিয়ে উত্তমবাবু জানিয়ে দেন, তিনি কোনও তথ্য পাননি।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদ সভাপতিকে হাজির হয়ে তথ্য আইন উপেক্ষা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেন রাজ্য তথ্য কমিশনার। তিনি অবশ্য নির্দিষ্ট ওই দিনে কমিশনারের সামনে হাজির ছিলেন না। ফের ১ মার্চ ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। ওই দিন স্বপনবাবুর বদলে হাজির হন তাঁর পাঠানো প্রতিনিধি বর্ধমানের সহকারী পরিদর্শক (প্রাথমিক বিদ্যালয়) মৃণালকান্তি ভট্টাচার্য। কমিশনারকে তিনি জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষা নিতে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি সংসদ সভাপতি।
তথ্য কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মৃণালবাবুর কাছে ওই ব্যাখ্যা শোনার পরে ফের ৭ মার্চ বিকেলে দিন নির্ধারণ করে সংসদ সভাপতিকে হাজির হতে বলেন তথ্য কমিশনার। কিন্তু স্বপনবাবু সে দিনও যথারীতি হাজির হননি। তবে তাঁর প্রতিনিধি মৃণালবাবু কমিশনকে একটি চিঠি দেন। সেখানে স্বপনবাবু বলেছিলেন, “উত্তমবাবু ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিষয়টি বিচারাধীন। ফলে এই মুহূর্তে কোনও তথ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
তথ্য কমিশনার কে জন কোশি অবশ্য ওই চিঠিতে সন্তুষ্ট হননি। তিনি তাঁর নির্দেশে জানান, জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি ইচ্ছা করেই ‘তথ্য জানার অধিকার আইন ২০০৫’-কে উপেক্ষা ও তথ্য জানাতে গড়িমসি করেছেন। সংসদ সভাপতিকে তাই জরিমানা করা হল।
উত্তমবাবুর অভিযোগ, “সমস্ত তথ্য দিলে ব্যাপক দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসত। তাই তথ্য দিতে রাজি হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।” স্বপন ঘোষের জবাব, “জরিমানার নির্দেশের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।” কিন্তু কেন তিনি ওই তথ্য দেননি, তা নিয়ে কোনও জবাব মেলেনি। |