চলন্ত ট্রেনের কামরার রড ধরে কোনও মতে ঝুলছিলেন এক যাত্রী। তাঁর শরীরটা ঝুলছিল প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের মাঝের ফাঁকা অংশে। যে কোনও মুহূর্তেই তিনি তলিয়ে যেতে পারতেন ট্রেনের নীচে। সেই দৃশ্য দেখামাত্র প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরা চিৎকার শুরু করে দেন। সেই চিৎকার শুনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই যাত্রীকে বাঁচালেন আরপিএফের এএসআই অঞ্জন ভট্টাচার্য। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে পুরুলিয়া স্টেশনে।
রেল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ পুরুলিয়া স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসেছিল টাটা-দানাপুর এক্সপ্রেস। ট্রেন থেকে নেমে বহু যাত্রীই ছুটেছিলেন প্ল্যাটফর্মের জলের কলে জল ভরতে। জলের বোতল নিয়ে তেমনই নেমেছিলেন ঝাড়খণ্ডের ছোটা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা রাজেশ গুপ্ত। সপরিবার টাটা থেকে যশিডি যাচ্ছিলেন তিনি।
জল যখন ভরা হয়, ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছে। জলের বোতল নিয়ে কামরার দিকে ছুটেছিলেন রাজেশবাবু। এক হাতে বোতল, অন্য হাতে ট্রেনের কামরার হাতল ধরতে পারলেও কামরার মধ্যে উঠতে পারেননি তিনি। ঝুলন্ত অবস্থাতেই চেষ্টা করছিলেন কামরায় উঠতে। কিন্তু পারেননি। |
চোখের সামনে এক যাত্রীর ওই হাল দেখে স্টেশনে উপস্থিত যাত্রী ও রেলের কর্মীরা চিৎকার শুরু করেন।
তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মেই নিজের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আরপিএফের বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগের এএসআই বছর সাতান্নোর অঞ্জনবাবু। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝুলতে থাকা ওই যাত্রীর হাত ও কোমর ধরে ট্রেনের নীচ থেকে টেনে বের করে তাঁকে কামরার সিঁড়িতে তুলে দেন অঞ্জনবাবু। নিজে ছিটকে পড়েন প্ল্যাটফর্মে। তাঁর চশমা ও মোবাইল ভেঙে যায়। অল্পবিস্তর আঘাতও পান। তবে চলন্ত ট্রেনে উঠে নিরাপদেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন রাজেশ।
আদ্রার বাসিন্দা অঞ্জনবাবু বলেন, “টেনে না-তুললে খুব বিপদ হত। তাই আর কিছু না-ভেবে ওই যাত্রীকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি।” ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুরুলিয়া স্টেশনেই কর্মরত আরপিএফের হেড কনস্টেবল সাগর সূত্রধর বলেন, “যে ভাবে অঞ্জনদা ওই যাত্রীকে বাঁচালেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।” আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকেই ঘটনাটি দেখতে থাকেন। বুঝতে পারেন না কী করে বাঁচাবেন। কিন্তু অঞ্জনবাবু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা রয়েছে।”
আরপিএফের আদ্রা ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার জ্যোতিকুমার সতিজা জানান, আসানসোল ডিভিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই যাত্রীর পরিচয় জানা যায়। অঞ্জনবাবুকে পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। |