মালদহের চাঁচলের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা গৌর দাস দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি আবার এলাকায় নিয়মিত ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেন। মেঘনাথ দাস শিলিগুড়িতে শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি নিজের এলাকায় ওই প্রকল্পে কাজ করেন। কাজ করে ডাকঘর থেকে তাঁরা টাকাও তোলেন। সশরীরে না হলেও অন্তত গ্রাম পঞ্চায়েতের খাতায় কলমে। দুই জনই জানেন না তাঁদের জব কার্ড রয়েছে। গৌর দাস, মেঘনাথ দাসদের দাবি, “আমাদের জবকার্ড রয়েছে তা জানি না। ডাকঘরে অ্যাকাউন্টের কথাও জানি না।” শুধু ওই দু’জন নয় এই ভাবে ভুঁয়ো জব কার্ড তৈরি করে দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। ডাকঘরের একাংশ কর্মীর সঙ্গে যোগসাজসে দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ২৭টি পাশবই। গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তাঁর এক আত্মীয় ও ডাকঘরের পোষ্টমাস্টারের বিরুদ্ধে পুলিশেও অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চাঁচলের আইসি জ্যোতিষ রায় বলেন, “১০০দিনের প্রকল্পের তদারকি করেন বিডিও। ওই অভিযোগ বিডিওর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি অনুমতি দিলেই মামলা করা হবে।” চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও ভূপ্রভা বিশ্বাস বলেছেন, “অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কিছু নথিপত্রও জমা পড়েছে। সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ব্লক তৃনমূল সভাপতি মজিবর রহমানের অভিযোগ, “গত শনিবার জগন্নাথপুর ডাকঘর বন্ধ হওয়ার পর পোষ্টমাস্টারের বাড়িতে বসে ১০০ দিনের কাজের ভুঁয়ো মাস্টাররোল তৈরির কাজ করছিলেন উপপ্রধান ও তাঁর এক আত্মীয়। সেখান থেকে ২৭টি পাশবই ও জবকার্ড উদ্ধার হয়। পুলিশ-প্রশাসনকে সবই জানানো হয়েছে।” যদিও কগ্রেসের প্রধান ফাইয়াজ আলমের দাবি, “দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়। বহু জবকার্ডধারী ভিনরাজ্যে গিয়েছেন। ওই কার্ডে কাজ করছেন তাঁদের আত্মীয়রা। ওই কাজের বিনিময়েই টাকা দেওয়া হয়। জবকার্ডধারীর এতে সম্মতি রয়েছে।” দুর্নীতির অভিযোগ একইভাবে অস্বীকার করেছেন পোষ্টমাস্টার অনুপ সরকার। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের পাশবই পঞ্চায়েত কর্তারা নিয়ে এসে ডাকঘরে জমা দেন। সেগুলি বাড়িতে বসে পরীক্ষা করছিলাম। কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা হবে তা পঞ্চায়েতই ঠিক করবে। একজন সাক্ষী রেখে টাকা দিয়ে দিই। অভিযোগ ভিত্তিহীন।” আর উপপ্রধান শৈলেশ সরকারও বলেন, “অনেক শ্রমিকরাই আমাদের টাকা তুলে দিতে বলেন। তৃণমূল এলাকায় রাজনীতি করছে। তদন্ত হলে সব পরিষ্কার হবে।” |