সদিচ্ছা থাকলে পরিকাঠামো যে অন্তরায় নয়, আবারও তা প্রমাণ করল চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল। ২০১১ সালে গ্রামীণ ও ব্লক-স্তরের হাসপাতালে প্রসব-সংখ্যার (সাধারণ ও অস্ত্রোপচার) নিরিখে জেলার মধ্যে প্রথম ও রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই গ্রামীণ হাসপাতাল। মঙ্গলবার আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলল তারা। সকাল দশটা নাগাদ হাসপাতালের স্বল্প পরিকাঠামোর মধ্যেই এইচআইভি-বাহক এক অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসকেরা। জন্ম হল ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের। মা-মেয়ে দু’জনেই সুস্থ রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “গ্রামীণ-স্তরের হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বিরল। আমরা ওই হাসপাতালকে পুরস্কৃত করব। ইচ্ছে থাকলে যে সবই করা যায়, এটা বোঝাতে প্রচারও চালাব।”
চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর এলাকার এক বধূ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোরে আসেন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম প্রতিহারকে দেখান তিনি। ওই বধূর কাছেই চিকিৎসক জানতে পারেন যে তিনি এইচআইভি-বাহক। রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন চিকিৎসক। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গৌতমবাবুর অধীনেই ওই বধূর চিকিৎসা চলে। হাসপাতাল থেকে সরকারি ভাবে ওই বধূর জন্য ওষুধপত্রেরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। প্রসবের সময়ে যাতে মহকুমা-স্তরের হাসপাতাল বা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ওই বধূকে ভর্তি করানো যায়, তার জন্য প্রচুর চেষ্টা করে ওই বধূর পরিবার। কিন্তু কোথাও ব্যবস্থা করতে না পেরে মাস দু’য়েক আগে ওই বধূ ও তাঁর পরিবারের লোকজন চন্দ্রকোনা হাসপাতালেই যাতে প্রসব হয়, তার ব্যবস্থা করতে গৌতমবাবুকে অনুরোধ করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তার পরেই গৌতমবাবু ও হাসপাতাল সুপার গোপাল দে অন্য চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। কয়েক জন কর্মী গোড়ায় আপত্তি জানান। সুপার তখন জেলার মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিককে সব জানান। সরকারি ভাবে নিমরাজি কর্মীদের কাউন্সেলিং করা হয়। তার পর শুরু হয় প্রস্তুতি। মঙ্গলবার গৌতমবাবুর নেতৃত্বে চিকিৎসক, নার্স মিলিয়ে মোট ৮ জনের একটি দল অস্ত্রোপচার করে। আধ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। ওই বধূ ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন হয়েছে ২ কিলো ৭০০ গ্রাম। অস্ত্রোপচারের পরে প্রসূতিকে হাসপাতালের একটি আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
সফল অস্ত্রোপচারের কথা জেনেই স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। চন্দ্রকোনা হাসপাতালের সুপার গোপাল দে বলেন, “খুব ভাল লাগছে।” যাঁর তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই চিকিৎসক গৌতমবাবুর বক্তব্য, “আমি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। আমাদের পরিকাঠামো স্বল্প। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে সবই করা যায়।” |