স্বাস্থ্য দফতরের ‘কোপে’ পড়ে বন্ধ হয়ে গেল সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা-পরিচালিত বেসরকারি প্যারামেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালের আইসিইউ ও ডায়ালিসিস ইউনিট। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিঠি পাঠিয়ে এই দু’টি ইউনিট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। এই নির্দেশ ঘিরে শোরগোল পড়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলেও। কারও বক্তব্য, পরিকাঠামোয় গলদ ছিল। তাই ইউনিট দু’টি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ঠিক পদক্ষেপই করেছে স্বাস্থ্য দফতর। আবার কারও বক্তব্য, এ ক্ষেত্রেও রাজনীতি হয়েছে। সংস্থার শীর্ষপদে দীপক সরকার রয়েছেন বলেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে। দু’টি ইউনিট বন্ধ রাখা সংক্রান্ত চিঠি এসেছে স্বীকার করে প্যারামেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন, “চিঠিতে যা করতে বলা হয়েছিল, আমরা তাই-ই করেছি। আশা করি, সব দিক খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য দফতর ফের ইউনিট দু’টি খোলার অনুমতি দেবে।”
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের বক্তব্য, “পরিকাঠামোগত গাফিলতি ছিল। দফতরের পরিদর্শনের পর নির্দিষ্ট রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই ওই দু’টি ইউনিট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।” ফের কি পরিদর্শন হতে পারে? মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া, “হতে পারে।” |
লক্ষ্মণ শেঠের পর এ বার দীপক সরকার। বেসরকারি হাসপাতাল ঘিরে ‘বিড়ম্বনায়’ আর এক দাপুটে সিপিএম নেতা!
মেদিনীপুর শহর লাগোয়া রাঙামাটিতে রয়েছে এই বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যারামেডিক্যাল কলেজ। ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব হায়ার এডুকেশন’ নামে এক সংস্থা এই বেসরকারি হাসপাতাল-কলেজের পরিচালনায় যুক্ত। সেন্টারের চেয়ারম্যান সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। ২০০২ সালে সূচনা প্যারামেডিক্যাল কলেজের। ২০০৪ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় হাসপাতালের। সব মিলিয়ে ২৫টি শয্যা রয়েছে। সঙ্গে আইসিইউয়ে ৮টি শয্যা ও ডায়ালিসিস ইউনিটেও ২টি শয্যা ছিল। এই হাসপাতাল-প্যারামেডিক্যাল কলেজ নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই গত ২০ জানুয়ারি পরিদর্শনে আসে স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধিদল। পরিদর্শন শেষেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য দফতর আইসিইউ ও ডায়ালিসিস ইউনিট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
চিঠিতে ঠিক কী বলা হয়েছে? বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, আইসিইউ ও ডায়ালিসিস ইউনিট দু’টি যেন এখন না-চালানো হয়, সেই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ডায়ালিসিস ইউনিটে যে কর্মী ছিলেন, তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। আর ডায়াসিসিস ইউনিটে ভেন্টিলেটর অচল। চিঠি পাওয়ার পরে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য দফতরকে তা-ও জানানোর কথা বলা হয়েছিল। ওই সব পদক্ষেপের কথা ইতিমধ্যে জানানোও হয়েছে। প্যারামেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “আমরা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেছি। চিঠির প্রেক্ষিতে কী কী পদক্ষেপ করেছি, তা-ও জানিয়েছি। ফের পরিদর্শনে আসারও অনুরোধ করেছি।”
প্যারামেডিক্যাল কলেজটি নিয়েও অবশ্য নানা অভিযোগ উঠেছিল। তার প্রেক্ষিতেও গত ১০ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধিদলও পরিদর্শন করে গিয়েছে। একই ক্যাম্পাসে বেসরকারি হাসপাতালের অদূরেই এই কলেজ। নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স, মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি বিষয়ে বিএসসি ও এমএসসি কোর্স পড়ানো হয় এখানে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনও রয়েছে। দোতলা বাড়ি। এক-তলায় যে কলেজ চলে সেটি পরিচালনা করে ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব হায়ার এডুকেশন’। দোতলায় আরও একটি প্যারামেডিক্যাল কলেজ চলে যেটি পরিচালনা করে অন্য এক সংস্থা। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, মূলত পরিকাঠামোর অভাব ও আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগই জমা পড়েছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই কলেজ পরিদর্শন হয়েছে। পরিদর্শকদল কলকাতায় ফিরে রিপোর্টও জমা দিয়েছে। যদিও ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
|