আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম-বিতর্ক সামলাতে ‘কলকাতা মাদ্রাসা কলেজ’কে বিশ্ববিদ্যালয় করার সুপারিশের পরে এ বার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। প্রকল্পটির বিশদ রিপোর্টও (ডিপিআর) তৈরি হয়ে গিয়েছে।
মহাকরণের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর-সূত্রের খবর: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে রাজারহাটে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজ্য যে কুড়ি একর জমি বরাদ্দ করেছে, তারই দশ একর জুড়ে পাঁচশো শয্যার হাসপাতালটি তৈরি হবে। প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজটিতে দু’শো পড়ুয়ার আসন থাকবে। ডিপিআর অনুযায়ী, পুরো প্রকল্পটি রূপায়িত করতে খরচ হবে ৫০১ কোটি টাকা।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক, সেখানকার সব পড়ুয়ারই আরবি ও ইসলামি ইতিহাস পড়া বাধ্যতামূলক। মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও তা-ই হবে বলে সংখ্যালঘু দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন।
আলিয়ার উপাচার্য শামসুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলতে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ এগিয়েছে বলে জেনেছি।” মহাকরণ-সূত্রের খবর, প্রস্তাবটি আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। তিনিই সংখ্যালঘু দফতরেরও মন্ত্রী। চলতি অর্থবর্ষে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯৮ কোটি বরাদ্দ হয়েছে।
এবং মুখ্যমন্ত্রীর ছাড়পত্র পেলে প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজের ভবন তৈরির কাজও শুরু হয়ে যেতে পারে বলে দফতর-সূত্রের ইঙ্গিত। এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ি বানাবে। মেডিক্যাল কলেজের বিল্ডিং নির্মাণের দায়িত্ব কে পাবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।”
তবে চলতি অর্থবর্ষেই মেডিক্যাল কলেজ ভবন তৈরির কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ দিকে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ এখন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। হঠাৎ একটা মেডিক্যাল কলেজ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে কেন? সরকারি এক কর্তার ব্যাখ্যা, “মুখ্যমন্ত্রী যদি চান, তা হলে এমনটা হতেই পারে।” তাঁর মতে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল কলেজ হলে সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েরা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ বেশি পাবেন। কিন্তু মেডিক্যালে তো ছাত্রভর্তি হয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার মাধ্যমে! তা হলে ওই মেডিক্যাল কলেজে মুসলিম ছাত্রছাত্রী বেশি পড়বেন, এমনটা বলা যাচ্ছে কী করে? যেখানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সব জাতি ও ধর্মের পড়ুয়াদের জন্য উন্মুক্ত?
আলিয়ার উপাচার্য বলছেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা রয়েছে, প্রত্যেক পড়ুয়ার আরবি ভাষাশিক্ষা আবশ্যিক। যে হেতু মাদ্রাসা শিক্ষার ভাবনা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে, তাই এখানে ইসলামি ইতিহাস পড়াও বাধ্যতামূলক।” এই নিয়মে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা বেশি সংখ্যায় আসতে চাইবেন বলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ধারণা। |