ফের অব্যবস্থায় রোগীর মৃত্যু এবং ক্ষিপ্ত আত্মীয়দের সঙ্গে কর্মীদের মারপিটে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিছু জুনিয়র ডাক্তারও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান বলে জানান কিছু প্রত্যক্ষদর্শী। যদিও পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়নি।
২৮ মার্চ বর্ধমান মেডিক্যালে রোগীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কিছু জুনিয়র ডাক্তারের মারামারির খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা। যে মামলায় দুই জুনিয়র ডাক্তারের আগাম জামিন নামঞ্জুর করতে গিয়ে বর্ধমানের জেলা জজ প্রভাতকুমার অধিকারী গত সপ্তাহে প্রশ্ন তোলেন, যাঁদের হাতে স্টেথোস্কোপ থাকার কথা, তাঁদের হাতে কী করে উঠল বাঁশ, লাঠি? জবাব মেলেনি। অভিযুক্তদের ধরা হয়নি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার ফের এই গণ্ডগোল ঘটে গেল। পরিস্থিতি সামাল পুলিশ ‘মৃদু’ লাঠি চালায়। কিন্তু কেন এই ‘পুনরাবৃত্তি’, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ব্যাখ্যা দেননি। সুপার অসিতবরণ সামন্তের দাবি, “আমি ও ডেপুটি সুপার সারা দিনই বাইরে ছিলাম। ঠিক কী ঘটেছে জানতে পারিনি।” |
রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে বচসা হাসপাতালের কর্মীদের। মঙ্গলবার উদিত সিংহের তোলা ছবি। |
মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগপত্র নেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায়। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রতি তাঁর মন্তব্য, “আপনারা তো সকলে মিলে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে লেখেন, মিথ্যে খবর দেখান। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।” সকালে মন্তেশ্বরের রায়বাটি মোড়ে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হন মিরপুর গ্রামের মুন্সি শমিম মহম্মদ (৪১) হন। বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে আসার সময়েই রক্তপাত হচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে তাঁর দাদা মুন্সি মহম্মদ আবুল হাসেম জানান, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা ৩ বোতল রক্ত জোগাড় করতে বলেন। তাঁর অভিযোগ, “সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে এক মহিলা মেডিক্যাল অফিসার জানান, স্টকে রক্ত নেই।”
অগত্যা জনা চল্লিশ আত্মীয়-বন্ধু নিয়ে ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে গিয়ে হাসেমরা অনুরোধ করেন, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে তিন জনের থেকে রক্ত নেওয়া হোক। তাঁর অভিযোগ, “রক্তপরীক্ষার বদলে মেডিক্যাল অফিসার হুমকি দেন, ‘এখুনি আপনারা বেরিয়ে না গেলে ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দেব।’ অনুরোধ সত্ত্বেও ওরা রক্ত না দেওয়ায় ভাই মারা গেল।” কিন্তু শমিমের মৃত্যুর পরেই গণ্ডগোল বাধে। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের কিছু কর্মী এবং কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার মৃতের আত্মীয়দের সঙ্গে বচসা ও পরে সংঘর্ষে জড়ান বলে অভিযোগ। শমিমের আত্মীয় শেখ নাজেম আলির অভিযোগ, ‘‘লাঠি হাতে কিছু লোক তাড়া করে। কয়েক জনের গলায় স্টেথোস্কোপ ছিল। ওরা বলছিল, সাংবাদিকদের পিটিয়ে তাড়িয়েছি। তোদেরও ছাড়ব না।”
সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার স্নেহাংশু মণ্ডল বলেন, “ওই আহতকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। তিনি মারা গেলে বাড়ির লোকেরা আমাদের উপরে চড়াও হন।” ২৮ মার্চের পর থেকে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন থাকে। তারাই পরিস্থিতি সামাল দেয়। |