ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার পরে দমকলে খবর দিতে দেরি হয়েছিল কেন? প্রশ্ন তুললেন আলিপুরের জেলা ও দায়রা জজ অনিন্দ্য ভট্টাচার্য নিজেই।
মঙ্গলবার এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব পায়নি আদালত। বিচারকের মন্তব্য, নাইট-ইনচার্জ সাজিদ হোসেন তৎপর হলে ওই হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড এমন ভয়াবহ আকার নিত না। অগ্নিকাণ্ডের রাতে সাজিদই ওই হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন। ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্য-সহ আমরির ধৃত সব কর্তার জামিন হয়ে গেলেও সাজিদ এখনও জেল-হাজতে আছেন। মঙ্গলবার বিচারপতি ভট্টাচার্যের আদালতে তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। আগুন লেগেছে জেনেও সাজিদ কেন সে-রাতে তৎপর হননি, তা জানতে চান বিচারক। সাজিদের আইনজীবীর কাছ থেকে যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর পায়নি আদালত। আগামী ৪ মে ফের ওই অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের বেসমেন্টে আগুন লাগার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সেই ঘটনায় হাসপাতালের ন’জন ডিরেক্টর-সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে সাজিদ ছাড়া বাকি সকলে ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এখনও ফেরার হাসপাতালের তিন কর্তা। এ দিন আলিপুরের জেলা এবং দায়রা জজের এজলাসে সাজিদের জামিনের আবেদনের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র ও সেলিম রহমান। সুদীপ্তবাবু আদালতকে জানান, এই মামলায় ওই হাসপাতালের পদস্থ কর্তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন। সাজিদ হাসপাতালের বেতনভুক কর্মী মাত্র। তা ছাড়া যে-সব কর্তা জামিন পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সাজিদের আইনগত অবস্থানও এক।
সাজিদের আইনজীবীদের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বিচারক বলেন, তাঁর আদালত থেকে ওই হাসপাতালের যে-সব কর্তা জামিন পেয়েছেন, তাঁদের আইনগত অবস্থান তিনি জানেন। এ ব্যাপারে তিনি সচেতন। তার পরেই অগ্নিকাণ্ডের রাতে অভিযুক্ত সাজিদের তৎপরতার অভাব নিয়ে মন্তব্য করেন বিচারক ভট্টাচার্য। সাজিদ যে আগুন লাগার পরেই তৎপর হয়েছিলেন, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে সেটা বোঝাতে চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেন, সাজিদই তো আগুন লাগার পরে দমকলে খবর দিয়েছিলেন।
বিচারক তখনই পাল্টা প্রশ্ন করেন, খবর দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু খবর দিতে দেরি হয়েছিল কেন? উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি অভিযুক্তের আইনজীবীরা। বিচারক অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীদের জানান, এ ব্যাপারে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর তিনি পাননি। অভিযুক্তের আইনজীবীরা যে-সব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। উত্তর দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত পক্ষ তখন কিছু সময় চায়। আদালত তা মঞ্জুর করে।
আদালতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সরকার পক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বিচারকের মন্তব্য সমর্থন করেন। আগামী ৪ মে অভিযুক্ত পক্ষের সওয়াল শেষ হলে সরকারি আইনজীবী সওয়াল শুরু করবেন। |