পঙ্গু হতে চলা দুই দাদার মুখে হাসি আনল যমজ ভাইবোন
বিরল জিনবাহিত অসুখে আক্রান্ত দুই সন্তান।
দৈনন্দিন কাজকর্ম, ওঠাবসার জন্যও বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল বছর চোদ্দোর অর্ঘ্য। স্কুল যাওয়া বন্ধ আজ বেশ কয়েক বছর। বছর নয়েকের অয়ন এখনও স্কুলে যায়। কিন্তু অসুখের লক্ষণ ফুটে উঠতে শুরু করেছে তার শরীরেও। বিরল এই অসুখটির চিকিৎসা যে হেতু কার্যত নেই, তাই বাবা-মায়ের চোখের সামনেই পুরোপুরি পঙ্গু হতে চলেছে দুই সন্তান।
তবে মাস দেড়েক হল বাগুইআটির তারক ও বেবি সাহার পরিবারে নতুন খুশির হাওয়া। বাড়িতে এখন একজোড়া নতুন অতিথি। অর্ঘ্য আর অয়ন পেয়েছে একসঙ্গে একজোড়া ফুটফুটে ভাইবোন। দেব আর রিয়া। সৌভাগ্যের বিষয়, ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) সাহায্য নেওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ সেই জিন আর আসেনি ওদের শরীরে।
অর্ঘ্য আর অয়ন জিনের যে অসুখে ভুগছে, তার নাম ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি বা সংক্ষেপে ডিএমডি। সাধারণত বছর পাঁচেক বয়সের মধ্যেই এই অসুখের লক্ষণ শরীরে ফুটে ওঠে। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশী নষ্ট হয়ে যায় এবং রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারায়। শেষের দিকে শ্বাসপ্রশ্বাসেও অসুবিধে হয়। সাড়ে তিন হাজার শিশুর মধ্যে এক জনের এই অসুখ হয়। শুধু ছেলেরাই এই ত্রুটিপূর্ণ জিনে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে রোগের বাহক কিন্তু মেয়েরা। অর্ঘ্যর যখন অসুখ ধরা পড়ল, তখন তার বয়স সাড়ে পাঁচ। তার আগে পর্যন্ত আর পাঁচটা শিশুর মতোই ছটফটে ছিল অর্ঘ্য। স্কুলে যেত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলত। হঠাৎই একদিন অর্ঘ্যর বাবার নজরে পড়ে, ছেলের পায়ের হাঁটুর নীচের পেশীতে একটা ফোলা ভাব। প্রথমে তেমন বোঝা না গেলেও আস্তে আস্তে সেটি বাড়তে থাকে। সঙ্গে একটু দুর্বলতা, খুঁড়িয়ে চলার প্রবণতা। সাধারণ ওষুধে কাজ না হওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অর্ঘ্য যায় শহরের একাধিক শিশু ও স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের কাছে। নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে অর্ঘ্য ডিএমডি রোগে আক্রান্ত। বেবিদেবীর দাদা এবং মামারও এই রোগ ছিল, কিন্তু তখন তা জানা যায়নি।
নতুন দুই অতিথিকে নিয়ে সুখী সাহা পরিবার। ছবি:সুমন বল্লভ
যত দিনে এই রোগের খুঁটিনাটি জানা গেল, তত দিনে তারকবাবুদের দ্বিতীয় সন্তান আসতে চলেছে। পেশায় আইনজীবী তারকবাবু ও তাঁর স্ত্রী ভেবেছিলেন, দ্বিতীয় সন্তান অন্তত সুস্থ হবে। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও ছেলে এবং অয়নের জন্মের পরে চিকিৎসকেরা জানালেন, সে-ও ত্রুটিপূর্ণ জিন নিয়েই জন্মেছে।
ডিএমডি-আক্রান্তদের গড় আয়ু ২৫-৩০ বছর। এগারো-বারো বছরের মধ্যে নিজে থেকে চলাফেরা, দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারায় তারা। উঠে বসা, স্নান, খাওয়া সব কিছুর জন্যই অর্ঘ্যকে এখন বাবা-মায়ের সাহায্য নিতে হয়। ঘরের মধ্যে ঘোরাফেরা হুইলচেয়ারে। বাড়িতেই এক জন আন্টি তাকে পড়িয়ে যান। অবসর সময়ে খেলা বলতে শুধু কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করতেও সাহায্য নিতে হয়।
দুই সন্তানকে চোখের সামনে তিলে তিলে পঙ্গু হতে দেখা, তবু মুখে হাসি ফুটিয়ে তাদের যথাসাধ্য খুশি রাখার বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেননি সাহা দম্পতি। তাদের আনন্দ দিতেই ফের সন্তানের জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) সাহায্য নিয়েছেন ওঁরা। তাঁদের যমজ সন্তান হয়েছে গত ৭ মার্চ। দু’জনেই সম্পূর্ণ সুস্থ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
বিশেষ এই পদ্ধতিতে সাহা দম্পতিকে সন্তানের জন্ম দিতে সাহায্য করেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর। গৌতমবাবু বলেন, “ওই দম্পতির আর সামনের দিকে তাকানোর কিছু ছিল না। হতাশায় ডুবে ছিলেন। পরীক্ষানিরীক্ষার পরে দেখলাম আইভিএফ পদ্ধতিতে বেবিদেবী হয়তো সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতেও পারেন। এবং সেই সন্তানদের শরীরে ত্রুটিপূর্ণ জিন বাহিত না হলে, ওঁদের বংশ থেকে রোগটি পাকাপাকি ভাবে বিদায় নেবে। হলও তাই।” তারকবাবু বলেন, “এই ভাবে যে আমরা সুস্থ সন্তানের বাবা-মা হতে পারব, তা কখনও ভাবিনি। বেঁচে থাকার নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছি অবশেষে।”
চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, অর্ঘ্য আর অয়নকে সব সময় খুশি রাখতে হবে। এক সঙ্গে খুদে একজোড়া ভাইবোন পেয়ে দুই দাদার মুখেই এখন ঝলমলে হাসি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.