মিছিল থেকে গ্রেফতার ৮০০
দিনভর গোলমাল, বন্ধ শিথিলে স্বস্তি
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চের ডাকা অনির্দিষ্টকালের বন্ধের দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবার ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ডুয়ার্সের কয়েকটি এলাকা। তবে এ দিন মোর্চা নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চ ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ শিথিল করায় স্বস্তি ফিরেছে।
বানারহাট, নাগরাকাটা, জয়গাঁ, ওদলবাড়িতে বন্ধ সমর্থকেরা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করলে পুলিশ অন্তত ৮০০ জনকে গ্রেফতার করে। তবে কোনও সংঘর্ষ হয়নি। তবে বড় গণ্ডগোল হয় মালবাজার লাগোয়া ওদলাবাড়িতে। পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে। জনতার ছোঁনা ঢিলে অন্তত ৫ জন পুলিশকর্মী জখম হন। বাসিন্দারা জানান, ওদলাবাড়িতে সাতসকালেই ঘিস নদীতে পাথর তুলতে গেলে একটি ট্রাক বন্ধ সমর্থকেরা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। দুপুরের দিকে বাগরাকোট মিনা মোড়ের কাছে একটি ছোট গাড়ি থামিয়ে চালককে নামিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই খবর চাউর হতেই উত্তেজনা বাড়ে। বন্ধ বিরোধী মানুষ দল বেঁধে ওদলাবাড়িতে জাতীয় সড়কে জড়ো হন। এক জন বন্ধ সমর্থকের স্কুটার কেড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই ওদলাবাড়ির চুইয়াবস্তী এলাকায় থাকা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অফিসে ভাঙচুর চলে।
খুনিয়ার মোড়ে পুলিশি প্রহরা। ছবি: সন্দীপ পাল।
সেখান থেকে চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, কাগজপত্র জাতীয় সড়কে ফেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে মালবাজারের মহকুমা শাসক দেবযানী ভট্টাচার্য সেখানে পৌঁছন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসডিপিও অরিন্দম সরকার বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পুলিশ বন্ধ বিরোধী জনতাকে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। ওই সময়ে তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতা দীবন মিত্রকে বিনা প্ররোচনায় লাঠি দিয়ে মারা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ কেন বন্ধ সমর্থকদের না-রুখে জনতার উপরে লাঠি চালাচ্ছে তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায়। শুরু হয় পাথর ছোঁড়া। পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। যে গাড়িটি এদিন বাগরাকোটের মোর্চা সমর্থকরা জ্বালিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ সেই গাড়ির মালিক সঞ্জীব সরকার বলেন, “মঙ্গলবার ভোরে এলেনবাড়ি চা বাগানের এক অসু্স্থ রোগীর পরিবার শিলিগুড়িতে যাওয়ার জন্যে গাড়ি ভাড়া করেন। চালক রোগী পৌঁছে যখন খালি গাড়ি নিয়ে ফিরছিলেন তখনই এই ঘটনা ঘটে।” তবে মোর্চার পশ্চিম ডুয়ার্স সভাপতি এবং বাগরাকোটের বাসিন্দা বিনোদ ঘাটানি বলেন, “গাড়ি জ্বালানোর ঘটনায় আমাদের কোন সমর্থক জড়িত নন। এটা আমাদের বদনাম করতে কেউ করেছে।” এসডিপিও জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিন সকালে চাপরামারির খুনিয়া মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ একদল মোর্চা সমর্থক জড়ো হন। খুনিয়া মোড়ে মোর্চা সমর্থকরা জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে মালবাজার থেকে এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী গেলে মোর্চা সমর্থকরা ফিরে যান। বানারহাট শহরেও জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। সকালে চালসা, মালবাজার, নাগরাকাটা এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাট খোলাই ছিল। বানারহাটের ব্যবসায়ী ও একাংশ সাধারন বাসিন্দাদের ডাকে বানারহাট শহরের স্কুল, সরকারি দফতর সবই এদিন বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাসিন্দারা এদিন মিছিল করে বানারহাট থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বনধের আহ্বানকারী যোথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক জন বার্লাকে গ্রেফতারের দাবি করেন তাঁরা। যৌথ মঞ্চের ডাকা বনধের বিরোধিতা করে সোমবার বানারহাটারে অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল। সকালে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে প্রায় দু হাজার বানারহাটের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মুখে কালো কাপড় বেঁধে থানা পর্যন্ত মৌন মিছিল করেন। থানায় গিয়ে তারা দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করেন। দুপুরে বানারহাটে এসে ১১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সমবেদনা জানান আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ লাকড়া। তাঁর কথায়, “তরাই- ডুয়ার্সের মানুষ তাদের বনধ শিথিল করাতে বাধ্য করেছেন।” আজ, বুধবার দুপুরে শিবমন্দিরে বৈঠকের আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে রাজেশবাবু জানান। ওই এলাকার ব্যবসায়ী নিলয় দত্ত বলেন, “আমরা ব্যবসা করে সংসার চালাই। সোমবার দেখলাম সশস্ত্র বনধ সমর্থকদের ঠেকাতে পুলিশ কিছুই ব্যবস্থা নিল না। রাজ্য সরকারের তরফেও ঘটনাটিকে ‘ছোট্ট’ বলা হল। এর পরে আর কোন সাহসে দোকান চালাব?”
জয়গাঁয় বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: নারায়ণ দে।
ব্যবসায়ী ও একাংশ স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে সুকল্যান ভট্টাচার্য, ভিক্টর বসুরা একসুরে বলেন, “যারা দোকানপাট পুড়িয়ে দিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা জন বার্লার গ্রেফতার দাবি করেছি। যতদিন না সেই দাবি মিটবে বানারহাটে বনধ চলবে। এদিন বিকেলে যৌথ মঞ্চের তরফে করা হলে, এদিন রাতে বানারহাটারে ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাসিন্দারা ফের বৈঠক বসেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার বানারহাটে দোকানে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানোর অভিযোগে পাঁচ বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও বানারহাটের একাংশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, যারা ভাঙচুর ও লুঠপাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা সরাসরি যুক্ত ছিলেন তাদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করেনি। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল জানান, এদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ৭২৭ জন বনধ সমর্থনকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা আরেসপি নেতা মনোহর তিরকি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “ডুয়ার্সের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। না হলে আগামী দিনে বড় ধরনের অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।”

তথ্য সহায়তা: নিলয় দাস, সব্যসাচী ঘোষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.