চাপের মুখে পড়ে সুর নরম
দু’দিন বন্ধ শিথিল করল যৌথ মঞ্চ
রে-বাইরে প্রবল চাপ ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চ তাঁদের অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ৪৮ ঘণ্টার জন্য শিথিল করল।
সোমবার থেকে এই বন্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, সাধারণ মানুষ বিরক্ত। ওই দিন বানারঘাট ও ওদলাবাড়িতে বন্ধ সমর্থক ও বিরোধীদের একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই ‘উত্তাপ’ বজায় ছিল মঙ্গলবারও। এই দিনও ওদলাবাড়িতে বন্ধ সমর্থকেরা একটি ছোট গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে পাল্টা হামলায় পুড়েছে বন্ধ সমর্থকের গাড়ি। এমনকী, সেখানে মোর্চার একটি অফিস ভাঙচুর করে আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন ক্ষিপ্ত জনতা। এরপরেই এই দিন বিকেল চারটে নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় বলেন, “প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু বাংলার মাটি ভাগ করতে দেব না।” তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভুটান সীমান্তের জয়গাঁয় মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের উপস্থিতিতে বন্ধ শিথিল করার কথা ঘোষণা করেন যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক জন বার্লা। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার শান্তির আর্জি জানিয়েছেন। আমরাও শান্তি চাই। তাই ২৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ শিথিল করছি।” তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “এই সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসন কিংবা রাজ্য সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া না পেলে ফের ২৭ এপ্রিল থেকে বন্ধের পথে নামতে হবে।” সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ বুধবার জয়গাঁর কাছে রাঙামাটি চা বাগান লাগোয়া বন বাংলোয় গুরুঙ্গ সহ যৌথ মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।
ওদলাবাড়িতে স্কুটার জ্বালিয়ে দিয়েছে বন্ধ বিরোধী জনতা। মঙ্গলবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।
বন্ধ শিথিল হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। তবে দু’দিন বাদে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কী হবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে। এই দিন, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুঙ্গ বলেছেন, “তরাই-ডুয়ার্স আমার কিংবা অন্য কারও একান্ত নিজস্ব জায়গা নয়। ওই দু’টি এলাকার আমজনতা যা চাইবেন সেটাই হবে।” গুরুঙ্গ বলেন, “নাগরাকাটায় সভার অনুমতির দাবিতে বন্ধ ডেকেছিল যৌথ মঞ্চ। পরে প্রয়োজনে সেই দাবিতেই মোর্চাও বড় আকারের বন্ধ ডাকবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, ঘোলাটে পরিস্থিতি কাটলে তবেই তরাই-ডুয়ার্সে কোনও দলকে মিটিং-মিছিলের অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবা হবে। তার পরে বন্ধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত অবশ্যই শুভবুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে। আশা করব, পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের মানুষের মিলেমিশে থাকার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই সকলে আগামী দিনে শান্ত থাকবেন। বন্ধ কিংবা পাল্টা বন্ধ ডেকে জনজীবন অচল করবেন না।” পাহাড়-তরাই ও ডুয়ার্সের উন্নয়নে আরও গতি আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তা দিতে এদিন রাতেই দার্জিলিঙে পৌঁছেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
বস্তুত, গত তিন দিনের ঘটনা পরম্পরা বলছে, লাগাতার বন্ধের জেরে বিস্তীর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ জমেছে, তার বহিঃপ্রকাশ যুযুধান আন্দোলনকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তার উপরে চা-পর্যটন-শিক্ষা ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রভাব পড়ায় পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের অর্থনীতিও ফের বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট সকলেই ‘বিরক্ত’। মোর্চার অন্দরের খবর, যে ভাবে আলোচনার টেবিলে গিয়ে জিটিএ চুক্তি হয়েছে, সে ভাবেই তরাই-ডুয়ার্সের বিষয়টি নিয়ে এগোনোর দাবি উঠেছে দলের মধ্যেই। জন বার্লার অনুগামী চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও একই বার্তা গিয়েছে নেতাদের অনেকের কাছেই। পক্ষান্তরে, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতৃত্বাধীন তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির মধ্যেও বন্ধ বিরোধী মত প্রবল হচ্ছে।
পাহাড়-তারাই-ডুয়ার্সে সম্প্রতি রক্ষার আবেদন জানিয়ে মিছিল বামেদের। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়-সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এই ‘বাস্তব’ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এদিন তরাইয়ে কোনও পক্ষকেই রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। দার্জিলিং পাহাড় ও লাগোয়া তরাইয়ের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কিন্তু, ডুয়ার্সের কয়েকটি এলাকায় বন্ধের সমর্থনে ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। সেই খবর চাউর হতেই বন্ধ বিরোধী জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি তো বটেই, ওই সব এলাকায় দলমত নির্বিশেষে মানুষ পথে নেমে সরব হয়েছেন। পাশাপাশি, পুলিশও কঠোর মনোভাব দেখিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার অভিযোগে উভয় তরফের কয়েকশো জনকে গ্রেফতার করে। কয়েকটি এলাকায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী (এসএসবি) টহল দিতে শুরু করে। এর পরেই যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মোর্চা সভাপতি। যৌথ মঞ্চ সূত্রের খবর, সেখানে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরে বন্ধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়। গভীর রাতে ওদলাবাড়ি চৌপথিতে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দার্জিলিং থেকেই পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হতে বলেন। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.