তাপমাত্রা তুঙ্গে উঠেই নিয়ে এল রসের বর্ষণ
পুড়তে পুড়তে দশ দিন। দীর্ঘ দহনের ‘তপস্যা’ই যেন বৃষ্টি নিয়ে এল দক্ষিণবঙ্গে। আর প্রতীক্ষার সেই বৃষ্টি এল এপ্রিলের পঞ্চম কালবৈশাখীর হাত ধরে।
এই তপস্যা আক্ষরিক অর্থেই তাপের তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠার তপস্যা। কারণ, কলকাতার তাপমাত্রা তুঙ্গে ওঠার পরেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নামল বৃষ্টি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন পৌঁছে যায় ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, চলতি মরসুমে সর্বোচ্চ।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষ দহন-জ্বালা সইতে সইতে দশ দিন অপেক্ষা করেছেন এই কালবৈশাখীর জন্য। গত দশ দিনে কখনও কখনও জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছে তাপপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে। কলকাতায় কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৪ ডিগ্রির উপরে ওঠেনি। তবে আর্দ্রতা চরমসীমায় পৌঁছে অস্বস্তিসূচককে ঠেলে তুলে দিয়েছিল উপরের দিকে। সেই দুঃসহ অবস্থার অন্তত সাময়িক অবসান ঘটাল এ দিনের কালবৈশাখী। মহানগরীর উপর দিয়ে যে-ঝড় বয়ে গেল, তার তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও।
বিষ্ণুপুরে শ্যামরায় মন্দিরের কাছে শিলাবৃষ্টি। ছবি: শুভ্র মিত্র।
কী ভাবে তৈরি হল এ দিনের কালবৈশাখী? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সোমবারেই দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছিল। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছিল জলীয় বাষ্প। জোড়া নিম্নচাপ অক্ষরেখার দৌলতেই তাপপ্রবাহ থেকে সোমবার কিছুটা মুক্তি পেয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ধাক্কায় দু’ডিগ্রি কমে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে কিন্তু পরিবর্তন ঘটে পরিস্থিতির। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে থাকা নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি হঠাৎই দুর্বল হয়ে পড়ায় জলীয় বাষ্প ঢোকার পরিমাণ কমে যায়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ফের বাড়তে শুরু করে। মহানগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যায় মরসুমের সর্বোচ্চ, ৩৯.৬ ডিগ্রিতে। আর তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যাওয়ার ফলেই ফের পরিবর্তন ঘটে বায়ুপ্রবাহের। উপরের স্তরে থাকা নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। দুপুরের পরে নতুন ভাবে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করে প্রচুর পরিমাণে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, “দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা সক্রিয় হয়ে ওঠায় তা জলীয় বাষ্পকে টেনে নিয়ে যায় ছোট নাগপুর অঞ্চলে। সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকায় গরম বাতাস উপরের দিকে উঠে যায়। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে জলীয় বাষ্প। সেই জলীয় বাষ্প উপরের দিকে উঠে তৈরি করে উল্লম্ব মেঘ। আর সেই মেঘই জন্ম দিয়েছে কালবৈশাখীর।” ‘তপের তাপের বাঁধন’ এ ভাবে কেটে দিয়েই সন্ধ্যায় শুরু হয় ‘রসের বর্ষণ’।
এ দিনের কালবৈশাখীটি এপ্রিলের পঞ্চম। তীব্রতার দিক থেকেও এটি পঞ্চম। এপ্রিলে এর আগেই ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার এবং ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার বেগের দু’টি কালবৈশাখী পেয়েছে কলকাতা। এ দিন ঝড় বয়েছে ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে। এর মাঝখানে আরও দু’টি কালবৈশাখী হয়েছে ৭৪ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি তীব্রতায়। দক্ষিণবঙ্গের বায়ুপ্রবাহের যা পরিস্থিতি তাতে আজ, বুধবারেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ফের বর্ষণের জন্যও নির্ভর করতে হবে নিম্নচাপ অক্ষরেখা দু’টির উপরেই। আবহবিদেরা জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নটাপ অক্ষরেখা দু’টি কী অবস্থায় থাকে, তার উপরে কয়েক দিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করছে। কালবৈশাখী না-হলেও স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। আর তাপমাত্রা যদি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়, তা হলে আসতে পারে কালবৈশাখীও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.