মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভাই’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার দায়ে ধৃত অঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গে এ বার অমর্ত্য সেনের নাম টেনে আনলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব। মঙ্গলবার সাংবাদিক-বৈঠক ডেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবু দাবি করেন, অমর্ত্য সেনের অনুরোধেই তিনি অঞ্জনকে ২০০৮ সালে হিডকোয় কাজ দিয়েছিলেন। গৌতমবাবুর দাবি, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যবাবুকে কোনও ভাবে খাটো করতে তাঁর নাম বলছেন না। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর্ত্যবাবুকে ফ্যাক্স করে অঞ্জনের বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে অমর্ত্যবাবু কোনও প্রতিক্রিয়া জানালে সেটাও তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলবেন।
অঞ্জনের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে বা হিডকোকে অন্যায় ভাবে ‘আক্রমণ’ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী। গৌতমবাবু বলেন, “দরকারে ২০০৮ থেকে অঞ্জনের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখা হোক, তাতেই বোঝা যাবে আমার সঙ্গে ওর কতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষ, “হিডকোয় ঢুকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরং গৌতম দেবকে দু’বার করে স্যালুট করুন কিংবা দু’টো করে বাতাসা দিন। কারণ, এই হিডকোর মাধ্যমেই আজকের নিউটাউন গড়ে উঠেছে, যার প্রধান কাণ্ডারী ছিলাম আমি।” |
এ দিন নিউটাউনে হিডকোর তথা তাঁর নিজের ‘সাফল্য’ তুলে ধরতেও সচেষ্ট হন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, “অঞ্জনের কীর্তির সঙ্গে জড়িয়ে হিডকোকে কোনও ভাবেই অপমান করবেন না। অযথা হিডকোর দুর্নীতি খুঁজবেন না। কারণ হিডকোর বহু একনিষ্ঠ কর্মী মিলে আমার নেতৃত্বে নিউটাউনটা তৈরি করেছে। টাটা মেডিক্যাল সেন্টার, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ, উইপ্রো-ইনফোসিস আসার বাতাবরণ তৈরি হওয়া সবই আমার আমলে।”
কিন্তু যাঁকে নিয়ে গৌতমবাবুকে বিতর্কে ‘জড়ানো’ হচ্ছে, সেই অঞ্জনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কী ভাবে? গৌতমবাবুর দাবি, অঞ্জন আদতে কংগ্রেসের কর্মী। তাঁর বাবা শান্তিনিকেতনে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। সেখানে থাকার সুবাদেই অমর্ত্যবাবুর সঙ্গে অঞ্জনের পরিচয়। সেই জন্যই ২০০৮ সালে অমর্ত্য সেনের কাছ থেকে গৌতমবাবুর কাছে অনুরোধ আসে অঞ্জনকে চাকরি দেওয়ার। গৌতমবাবু বলেন, “২০০৮ সালের আগে আমি অঞ্জনকে চিনতাম না। ওঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আমার কিছু জানা নেই।”
অঞ্জনকে হিডকোয় গুরুত্বপূর্ণ ‘দায়িত্ব’ দেওয়ার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “অঞ্জন হিডকোয় জনসংযোগ আধিকারিক ছিল। আমার সাংবাদিক বৈঠকগুলির ব্যবস্থাপনায় থাকত। ওর সঙ্গে আমার কিছু ছবিও আছে। কী সমস্যা, তাতে? কারও সঙ্গে ছবি থাকা মানেই তো ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ নয়। আমার সঙ্গে বড়-বড় রাষ্ট্রনেতারও ছবি আছে। তাতে কী প্রমাণ হল?” মদ্যপান করে অফিসে আসার জন্য অঞ্জনকে তিনি এক বার প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন গৌতমবাবু।
বাম আমলের প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, তৃণমূল সরকারের আমলেই বরং প্রতিপত্তি বেড়েছে অঞ্জনের। তিনি বলেন, “নতুন সরকারের আমলে ওকে ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি টু চেয়ারম্যান’ করা হয়। চেয়ারম্যানের পাশের ঘরে ও বসত। কই, আমার সময়ে তো কোনও দিন এমন হয়নি।”
গত শুক্রবার অঞ্জন কাঁথিতে গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশের তদন্তেও অঞ্জনের বিষয়ে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের নলহাটি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন অঞ্জন।
গৌতমবাবু এ দিন চিটফান্ডের মালিকদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অঞ্জনের যোগাযোগ নিয়েও অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “অঞ্জন চিটফান্ড মালিকদের একটি সংবাদপত্রে কিছু দায়িত্ব পেয়েছিল। একটি ‘অডিও-ভিস্যুয়াল চ্যানেল’-এর সঙ্গে জড়িত ছিল।” কাঁথিতে ধরা পড়ার সময়ে অঞ্জনের কাছ থেকে একটি সংবাদ চ্যানেলের ‘প্রেসকার্ড’-ও পায় পুলিশ। আজ, বুধবার কাঁথিতে অঞ্জনকে আদালতে হাজির করানোর কথা। |