হুঁশিয়ারি নয়, বললেন সুদীপ
ঋণ নিয়ে কেন্দ্রের জবাবে অসন্তুষ্ট তৃণমূল
রাজ্যের ঋণের বোঝা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ‘প্রতিক্রিয়ায়’ খুশি নয় তৃণমূল।
আজ রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মোট ঋণের পরিমাণ কত? সেই ঋণ শোধ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও চিঠি কেন্দ্র পেয়েছে কিনা? এবং, পেয়ে থাকলে সে ব্যাপারে তাদের বিস্তারিত কী ভাবনা রয়েছে? এই প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী নমো নারায়ণ মিনা বলেন, ২০১১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে। বিষয়টি বিবেচনাধীন।
কেন্দ্রের এই জবাবে ‘অসন্তুষ্ট’ সুখেন্দুশেখর পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যা জানতে চেয়েছিলাম, তার জবাব পাইনি। ৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণের প্রসঙ্গ উঠবে। তখন আমরাও সংসদের ভিতরে-বাইরে বিষয়টি নিয়ে সরব হব।”
৩৪ বছরের বাম শাসনে রাজ্যের ঘাড়ে অসহনীয় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিন বছরের জন্য ঋণ শোধ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রকে ১৫ দিন সময় দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্র ও রাজ্যের নেতারা একে ‘হুঁশিয়ারি’ আখ্যা দিলেও মমতা তা বলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, তিনি ঋণ শোধ স্থগিত করার ‘আর্জি’ জানিয়েছেন, ‘হুঁশিয়ারি’ দেননি।
গত কাল মমতার এই বক্তব্যের পরে আজ নয়াদিল্লিতে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপদে ফেলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্য নয়। গত ৩৪ বছর ধরে তৈরি হওয়া ঋণের বোঝা যাতে কমে, সেটা দেখার জন্য আমরা কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।” সুদীপবাবুর দাবি, সরকারের উপর চাপ বাড়ানো তৃণমূলের উদ্দেশ্য নয়। রাজ্যের উন্নতির জন্য প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্রের কাছে দরবার করে আসছেন মমতা। ভবিষ্যতেও করবেন।
পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা কমাতে কেন্দ্র যে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, সে কথা আজ রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। তবে বেশির ভাগ সুবিধাই দেওয়া হয়েছিল বাম আমলে। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজ্যকে তিনটি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ২০১০ সালের ৩১ মার্চ অর্থ দফতরের দেওয়া মোট ৮,৬৩৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ নতুন করে বাড়িয়ে কুড়ি বছর করে দেওয়া হয়েছে। সুদের হারও কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে সাত শতাংশ। দ্বিতীয়ত, ২০১০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দেওয়া যে মোট ১১০ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা ঋণ ছিল, গত মার্চে তা মকুব করে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, স্বল্প সঞ্চয় খাত থেকে পাওয়া ঋণের উপরে সুদ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০১০-’১১ এবং ২০১১-’১২ সালে এই ছাড়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৩ কোটি ৮১ লক্ষ ও ২৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া ২০০৬-’০৭ সাল পর্যন্ত এই খাতে নেওয়া মোট যে ঋণ ছিল, তার উপরে সুদের হার কমিয়ে ৯% করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই সব ‘ব্যবস্থায়’ মোটেই খুশি নয় তৃণমূল। তাদের দাবি, আগামী তিন বছর রাজ্যের দেয় সুদ-আসল কেন্দ্রীয় অনুদান হিসেবে গণ্য করা হোক। সুদীপ বলেন, “ইউপিএ-র প্রথম দফায় সিপিএম সরকারের অন্যতম সমর্থক ছিল। আর তাই সে সময় কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে ঢালাও ঋণ দিয়েছে। আজ মমতা এসে কেন তার দায় নেবেন?” অন্য দু’টি ঋণগ্রস্ত রাজ্য কেরল এবং পঞ্জাবের তুলনায় যে পশ্চিমবঙ্গে বোঝা অনেক বেশি, কেন্দ্রকে সে কথা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য গত কালও বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও একটি রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা কঠিন। তা হলে অন্য রাজ্যগুলিও তাদের দাবি নিয়ে সরব হবে। তবে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে শরিক তৃণমূলের প্রতি এখন যথেষ্ট নরম কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই কারণে, মমতার দাবি সম্পর্কে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া তো নয়ই, বরং সহানুভূতিশীল মনোভাবই দেখাচ্ছেন তাঁরা। প্রণববাবুও স্বীকার করেছেন যে, পঞ্জাব বা কেরলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা চলে না। ৩৪ বছর বাম শাসনের পর তৃণমূল সদ্য ক্ষমতায় এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন সরকারের উপর চাপ অনেক বেশি। তবে ‘চাপ’ কমাতে কেন্দ্র কোন পথ নেবে, তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন সরকারের শীর্ষ নেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.