ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ, ছেলে ও মা ধৃত বসিরহাটে
কবর থেকে বালিকার দেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ
বর থেকে এক বালিকার দেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ। মারুফা ওরফে জাহানারা সর্দার (৯) নামে ওই বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে বদরুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলেকে ওই কাজে সাহায্য করার জন্য তার মা বিউটি বিবিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘোড়ারস-মাঝেরপাড়া গ্রামে। ধৃতদের কঠিন শাস্তির দাবিতে এদিন তাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় একদল গ্রামবাসী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে একটা ব্যাগ নিয়ে মারুফা আম কুড়োতে গিয়েছিল বদরুলের বাড়ির পাশের আমবাগানে। মারুফার মা তাজমিরা বিবি বলেন, “তার পরে থেকেই মেয়ের খোঁজ মিলছিল না।” ইতিমধ্যে গ্রামে রটে যায় মারুফাকে জিনে ধরেছে।
এখানেই পাওয়া যায় মারুফার দেহ। ছবি: নির্মল বসু।
রবিবার ভোরে মারুফার দিদিমা মাজেদা বিবি মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে বদরুলদের বাড়ির কাছে একটি পুকুরের ধারে পাটখেতে মারুফার বিবস্ত্র দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে মারুফার বাড়ির লোকেরা গিয়ে দেহ উদ্ধার করে আনেন।
মারুফার বাবার দাবি, ঘটনাটি স্থানীয় পঞ্চায়েত সজস্যকে জানালে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তিনি মেয়েকে কবর দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। সেইমতো রবিবারই তাকে কবর দেওয়া হয়। ঘটনার পরে বদরুলের আচরণ দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর। তার প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামল ঘোষের উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসে।
সভায় যেহেতু তাঁর বাড়ির কাছে নিখোঁজ মারুফার দেহ মিলেছে তাই সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন কি না তা বিউটি বিবিকে জিজ্ঞাসা করা হয়। এর উত্তরে বিউটি দেবী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকলে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। কয়েকজন তখন বিউটিদেবীর বাড়িতে যান। সেখান থেকে পাওয়া যায় মেয়েদের চুল, মারুফার পোশাকের একটা অংশ ও যে ব্যাগ নিয়ে মারুফা আম কুড়োতে গিয়েছিল সেটি। সালিশি সভায় তার মাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জেনে বদরুল কাছেই ঘোড়ারস স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে পালানোর চেষ্টা করে।
অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর
স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা তাকে ধরে ফেলে। এর পর বদরুল ও বিউটি বিবিকে মারধর করে ক্লাবঘরে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে। এর পরই নুর ইসলাম তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে বদরুল ও তার মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “প্রকৃত ঘটনা জানতে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মা ও ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এ দিকে থানায় না জানিয়ে কেন তিনি মৃতদেহ কবর দিলেন সে প্রশ্নে মারুফার বাবা নুর ইসলাম সর্দার বলেন, “পঞ্চয়েত সদস্য শ্যামল ঘোষ আমাদের বলেছিলেন, পুলিশকে জানালে সমস্যা হবে। সেই কারণে কবর দিয়ে দিতে বলেন।” যদিও এ কথা অস্বীকার করে শ্যামলবাবু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্তের চেষ্টা চলছে।
অভিযুক্ত ছেলে ও মা।
মেয়েটির ব্যাপারে ওঁরা আমার কাছে এসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু আমি বলেছিলাম পুলিশকে জানাতে। কিন্তু ওঁরা নিজেরাই পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দেহ কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ধৃত বদরুল জেরায় জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে মারুফাকে আমবাগানে দেখতে পেয়ে সে তাকে খাবারের লোভ দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। তার মা তখন বাড়ি ছিলেন না। সেই সুযোগে সে মারুফাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে মারুফা ঘটনার কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে পারে এই আশঙ্কায় সে তাকে খুন করে। খুনের পরে দেহ একটি বস্তায় পুরে সে খাটের নীচে রেখে দেয়। রাতে বাড়ি ফিরে বিউটি বিবি সমস্ত ঘটনা জানতে পারেন। তিনি তার প্রতিবাদ করলে তাঁকেও খুনের ভয় দেখায় বদরুল। ভয়ে বিউটি বিবি প্রতিবেশীদের কিছু জানাননি। ঘটনার পরে তিনদিন কেটে যাওয়ার পর মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে দেখে ঘরের পিছনে পুকুরের ধারে বস্তাটি ফেলে দেয় বদরুল। এর পরে মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মারুফার দেহ কবর থেকে তোলা হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.