স্কুল চত্বরে ছাত্রকে গুলি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ওই স্কুলেরই ক্যান্টিনের এক কর্মীকে। কেন ওই ছাত্রকে গুলি করা হল তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় অশোকনগরের সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে গুলিবিদ্ধ হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অনিকেত সিংহ। বারাসতের একটি নার্সিংহোমের আইসিসিইউ-তে ভর্তি সে। গুলি কাঁধের নীচে লেগে বেরিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পীযূষ দত্ত ওরফে তোতা নামে স্কুলের ক্যান্টিনের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। অশোকনগরেরই হরিপুর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক এর আগেও বেআইনি অস্ত্র রাখা, মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁকে জেরা করে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই ওয়ান শটারের গুলিতেই জখম হয়েছে অনিকেত। স্কুলের পাশে একটি মোবাইল টাওয়ারের নীচের ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্রটি। কিন্তু ছেলেটিকে কেন গুলি করা হল, তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশ কর্তারা। পীযূষকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য।
|
আহত অনিকেত ।
নিজস্ব চিত্র |
বালিগঞ্জ ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের বাড়ি থেকে বারাসতে এসেছেন অনিকেতের বাবা অমরনাথ সিংহ। কাজ করেন এক চিকিৎসকের চেম্বারে। একমাত্র সন্তান অনিকেতকে বছর তিনেক আগে ভর্তি করেছিলেন এই আবাসিক স্কুলে। অমরনাথবাবুর কথায়, “আমার ছেলে একটু চঞ্চল ঠিকই। কিন্তু খুব পরোপকারী। কী ভাবে এমন ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না।” মঙ্গলবার ১১ জন আবাসিক ছাত্রকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে ক্লাস হয়েছে। বছর কয়েক আগে ‘অশোকনগর-কল্যাণগড় এডুকেশনাল রিসার্চ সোসাইটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তার আওতায় তৈরি হয় একটি কলেজ ও এই স্কুলটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় এই স্কুলের চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা। পাশেই ‘মিলেনিয়াম পার্ক’। সেখানেও দুষ্কৃতীরা আস্তানা গাড়ে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে ‘অশোকনগর-কল্যাণগড় এডুকেশনাল রিসার্চ সোসাইটি’র সম্পাদক স্বপন দে বলেন, “বাইরের কেউ এখানে যাতায়াত করে না। দু’জন রক্ষী এবং দু’টি কুকুর রাখা হয়েছে। সোমবারের ঘটনার পরে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা ভাবা হচ্ছে।” স্বপনবাবু বলেন, “বিশাল চত্বর। কোথা দিয়ে কেউ ঢুকে পড়লে সব সময় নজরে রাখাও মুশকিল।”
অশোকনগরের বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায়ের কথায়, “সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই স্কুল চত্বরে আশ্রয় নেয়।” অভিযোগ অস্বীকার করে এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে ওখানে কে বা কারা দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিয়েছে, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” স্কুলের পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএম নেত্রী শর্মিষ্ঠা দত্ত বলেন, “আমি পরিচালন সমিতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। শুনেছি বাইরের লোকজন যাতায়াত করে।” তিনি পরিচালন সমিতিতে থাকাকালীন কি বাইরের লোক ঢুকত স্কুল চত্বরে? শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, “আগে এমন হয়েছে বলে শুনিনি।” |