|
|
|
|
নেতাই-মামলা |
নতুন করে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সিবিআইয়ের চার্জশিটের ভিত্তিতে মেদিনীপুরের মুখ্য দায়রা বিচারক নেতাই কাণ্ডের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে চার্জ গঠন করেছিলেন, মঙ্গলবার তা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া নতুন করে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া মঙ্গলবার রায় দিয়ে বলেন, “চার্জ গঠনের সময়ে বিচারক ঠিকমতো মনঃসংযোগ করেননি। তার ফলে ভ্রান্তি ঘটে গিয়েছে।” বিচারপতির নির্দেশ, ১৫ দিনের মধ্যে মেদিনীপুরের মুখ্য দায়রা বিচারককে নতুন করে ওই মামলার চার্জ গঠন করতে হবে।
ভ্রান্তির বিশদ ব্যাখ্যা করে বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, চার্জে যে ১৪৯ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে তা ‘অতিরঞ্জিত’। ওই ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই চার্জ খাটে না বলেই রায় দিয়েছেন বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া। আবেদনকারীর আইনজীবীর তোলা বিভিন্ন প্রশ্নের যে জবাব সিবিআইয়ের আইনজীবী এ দিন দিয়েছেন, তাতেও সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি। বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া বলেন, “বিষয়ের গুরুত্ব অনুযায়ী চার্জ গঠনে এক জন মুখ্য বিচারকের যতটা মনোনিবেশ করা উচিত, তা করা হয়নি।”
নেতাই কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত অবনীভূষণ সিংহ চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। অবনীবাবু এখন জেলে। আবেদনকারীর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় এ দিন সওয়ালে বলেন, নেতাইয়ে গুলি চালনার ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছে সিআইডি। তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করে ৩৩ জনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছিল। কিন্তু সেই বক্তব্যের কোনও প্রতিলিপি অভিযুক্তদের দেওয়া হয়নি, আদালতেও জমা পড়েনি। এর পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সিবিআই নতুন করে ওই ৩৩ জনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে। সিবিআই-ই চার্জশিট জমা দেওয়ার সময়ে সিআইডি-র নেওয়া বয়ান আদালতে জমা দেয়।
মিলনবাবু বলেন, সিবিআইয়ের এই ভূমিকা একেবারেই বেআইনি। চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে সিআইডি-র নেওয়া সাক্ষীদের লিপিবদ্ধ বয়ান আদালতে পেশ করা হয়নি, অভিযুক্তদেরও দেওয়া হয়নি। এই অসঙ্গতির পরেও মেদিনীপুরের মুখ্য দায়রা বিচারক কী ভাবে চার্জ গঠন করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মিলনবাবু। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী (অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল) ফারুক রেজ্জাক বলেন, সিআইডি এবং সিবিআই-য়ের গ্রহণ করা বিবৃতির মধ্যে বিশেষ ফারাক ছিল না বলেই সিবিআই দুটি বিবৃতি এক সঙ্গে আদালতে জমা দিয়েছে। বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া রেজ্জাকের এই যুক্তি মানেননি।
চার্জ গঠনের আরও একটি ভুলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মিলনবাবু বলেন, চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে তদন্তকারী অফিসারকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নেওয়ার সময়ে বলা হয়েছে, অস্ত্র আইনের ২৭(আইআই) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু আদালতে যে চার্জশিট সিবিআই জমা দিয়েছে, সেখানে অস্ত্র আইনের ২৭(৩) ধারা দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের পরেও দায়রা বিচারক কী ভাবে চার্জ গঠন করলেন, তা জানতে চান মিলনবাবু। রেজ্জাক যুক্তি দেন, চার্জ গঠনের সময়ে টাইপ করতে গিয়ে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া বলেন, এটা কোনও ভাবেই নিছক টাইপ করার ভুল নয়।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গুলি-চালানোর ঘটনায় ২ মহিলা-সহ ৭ জন মারা যান। আহত আরও ২ মহিলার পরে মৃত্যু হয়। সিআইডি ঘটনার তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্তেরা ধরা না পড়ায় পুলিশি তদন্তের গাফিলতির অভিযোগ তুলে ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থের মামলা হয়।
প্রাথমিক ভাবে সিআইডিকেই তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু তদন্তের অগ্রগতিতে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। ৪ এপ্রিল ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে ২০ জনের নামে চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের বিশেষ দায়রা বিচারক মধুমতী মিত্র ওই মামলার চার্জ গঠন করেন। চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন অন্যতম অভিযুক্ত অবনীভূষণ সিংহ। মঙ্গলবার সেই মামলার রায় দিল হাইকোর্ট। |
|
|
|
|
|