|
|
|
|
‘দলতন্ত্রে’ অভিযুক্ত তৃণমূল |
অনুষ্ঠানে ব্রাত্য বাম সভাধিপতি, সাংসদ |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
‘দলতন্ত্র’ পিছু ছাড়ছে না শাসক তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানেও নয়! মঙ্গলবার আবারও তার প্রমাণ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরে। |
 |
লালগড়ে যাওয়ার পথে শালবনির ভাদুতলায় মুখ্যমন্ত্রী। |
মঙ্গলবার জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লালগড় ও ডেবরায় দু’টি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। নানা প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া-সহ বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদরা আমন্ত্রিত ছিলেন। ছিলেন সস্ত্রীক চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ প্রমুখ। কিন্তু একটি অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পাননি সিপিএমের জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। যে দু’টি এলাকায় (লালগড় ও ডেবরা) অনুষ্ঠান, সেখানকার বাম সাংসদদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ঝাড়গ্রাম লোকসভার মধ্যে পড়ে লালগড়। এখানকার সাংসদ সিপিএমের পুলিনবিহারী বাস্কে। আর ডেবরা পড়ে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে, যেখানকার সাংসদ সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত। |
 |
ডেবরার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়। |
ক’দিন আগেই সিপিএম ‘বয়কটে’র আহ্বান জানিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানেও জেলা সভাধিপতি বা সাংসদদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর মতকেই সমর্থন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা সুস্থ গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলেই মনে করি।” সেই সঙ্গে সভাধিপতির বক্তব্য, “ডেবরা হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী আবাসন তৈরির প্রস্তাব মঞ্জুর হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই। জেলা পরিষদও ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। সব টাকা-ই দিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার ও সিপিএমের দখলে থাকা জেলা পরিষদ। ঘটা করে যার ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করতে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কাঁথি, তমলুকের সাংসদও আমন্ত্রিত। অথচ, এলাকার সাংসদ বা জেলা পরিষদের সভাধিপতি আমন্ত্রিত নন।” |
 |
লালগড়ের সভায় গলদঘর্ম আলোকচিত্রীদের তোয়ালে দিচ্ছেন মমতা। |
এ সবের মাঝেও অবশ্য ‘সৌজন্য’ দেখাতে এক জায়গা থেকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে সভাধিপতিকে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা সেই আমন্ত্রণপত্র দিয়ে গিয়েছেন। তার সঙ্গে অনুরোধ করেছেন তিনি যেন লালগড়ে আমকোলা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে আসেন। সেই কার্ডে অবশ্য অতিথি হিসাবে তাঁর নাম নেই। যেখানে অতিথি হিসাবে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও আমন্ত্রিত সেখানে ঝাড়গ্রামের সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে বা সভাধিপতি ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন। তাই আমন্ত্রণ-লিপি উল্টেপাল্টে দেখে কেবল মুচকি হেসেছেন সভাধিপতি। অন্তরাদেবী বলেন, “তবু সেচ দফতরের আধিকারিকেরা মনে করে একটা কার্ড তো দিয়ে গিয়েছেন। নাই বা অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানাল। এটাই একটা সৌজন্য!” তাঁর আরও সংযোজন, “আমাদের না-ই আমন্ত্রণ জানাক। জেলার উন্নয়নে তো নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভাল লাগছে। তবে দেখার, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়। বাস্তবায়িত হলে জেলার মানুষই উপকৃত হবে। আমরাও তাই চাই।”
|
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি |
• পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৬টা মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে ডেবরা, শালবনি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামে। বাচ্চা ও মায়েদের বিশেষ ইউনিট হবে চন্দ্রকোনা, সবং, বিনপুর, দেপাড়া, বেলদা, কেশপুর, গড়বেতা, তপসিয়ার হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
• খড়্গপুরে ট্রমা সেন্টার।
• লালগড়, খড়্গপুরে নার্সি-ট্রেনিং সেন্টার।
• খড়্গপুর, পুরুলিয়ায় মেডিক্যাল কলেজ।
• গোয়ালতোড়ে এক হাজার একর জমি পড়ে। সেখানে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট’ হবে। ২০-৩০ হাজার মানুষ চাকরি পাবে।
• জঙ্গলমহলের ছাত্রীদের ২২ হাজার সাইকেল দেব বলেছিলাম। ১৮ হাজারেরও বেশি দেওয়া শেষ।
• ‘নিজ ভূমি, নিজ গৃহ’ প্রকল্প চালু করেছি। আগামী ৫ বছরে রাজ্যে যত গরিব পরিবার আছে, সবার বাড়ি হবে।
• আরও বেশি কৃষককে কিষান ক্রেডিট-কার্ড।
• জঙ্গলমহলের ১০ হাজার ছেলেমেয়েকে পুলিশে চাকরি দেব বলেছিলাম। জুলাই-অগস্টের মধ্যে সব নিয়োগ হয়ে যাবে। চাকরির জন্য আবেদনকারীদের নিয়ে ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ হবে।
• আবেদনের ৪ সপ্তাহের মধ্যে জাতিগত শংসাপত্র।
• তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ-বৃদ্ধি।
• অলচিকিতে পড়াতে সিলেবাস তৈরি করছি।
• একশো দিনের কাজে গড়ে ১৮ দিন কাজ হত। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে তা ৩৩ দিন হয়েছে। আসছে বছর ৬০ দিন করব। দরকার হলে রাজ্য কর্মসূচি নেবে। ১০০ দিনের প্রকল্প বাড়িয়ে ২০০ দিনের করে দেব। দিনের টাকা দিনে দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের সাথে কথা বলছি। |
|
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
 |
|
|