|
|
|
|
রাস্তা হয়নি, ‘জনতা’র কথায় সায়
জনতার, মঞ্চে বসে শুনলেন মমতা |
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
উন্নয়ন কতটা হয়েছে তা জানতে ও জানাতে, জঙ্গলমহলের সভা-মঞ্চে ‘জনতা’কে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘জনতা’ মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন, “রাস্তা হয়নি।” প্রতিধ্বনি করল জনতা।
জনতা আদক। লালগড়ের নেতাইয়ে ২০১১-র ৭ জানুয়ারির সেই গুলি-কাণ্ডে নিহত গীতালি আদকের মেয়ে।
নেতাইয়ে নিহতদের পরিজনদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজের বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন। বছর একুশের জনতা আদকও মেদিনীপুরে জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটর প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। মাস গেলে ভাতাও পাচ্ছেন। মঞ্চে ডেকে সেই ‘জনতা’র কাছেই মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, নেতাইয়ে পাকা রাস্তার কাজ এগিয়েছে কি না। ভিড়ের মধ্যে থেকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মঞ্চে ডাকায় আপ্লুত ওই তরুণী কিন্তু খোলা মনেই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, রাস্তা হয়নি। মাইক্রোফোনের সামনেই জনতা আদকের জবাব শুনে সমাবেশের আমজনতাও চিৎকার করে ওঠে, ‘রাস্তা হয়নি’। |
|
সেই সময়। জনতা আদককে মঞ্চে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার লালগড়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
মুখ্যমন্ত্রীকে তখন ডাকেন জেলা-প্রশাসনের এক কর্তাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তকে এগিয়ে এসে জানান, অর্থ-বরাদ্দ হলেও কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে শীঘ্রই শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রীই ফের জনতা ও আমজনতাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “চলাচলের জন্য সাময়িক একটা ব্যবস্থা হয়েছিল। টেন্ডার করে স্থায়ী পাকা রাস্তার কাজও শুরু হয়ে যাবে শিগগিরই।”
জঙ্গলমহলের জন্য তাঁর গুচ্ছ-গুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘিরে তৈরি হওয়া সংশয় কাটাতে জানুয়ারির গোড়ায় ঝাড়গ্রামের সভামঞ্চে আমলা-সচিবদের সাক্ষী মেনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতিকরা মিথ্যে বলতেও পারে। কিন্তু ওঁরা সরকারি অফিসার।” আমলা-সচিবরা বলেছিলেন, ঘোষিত নানা প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। তার পরেও অবশ্য জন-মনে অনেক প্রশ্ন, সংশয় রয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর চতুর্থ দফার জঙ্গলমহল সফরে ‘জনতা’র সাক্ষ্যের পরে সেই ‘সংশয়’ অবশ্য কাটল না।
উন্নয়নের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলে শান্তিস্থাপনও ছিল নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ। সেই ‘শান্তি’ যাতে আর বিঘ্নিত না হয়, সে জন্যও লালগড়ের সভামঞ্চ থেকে এ দিন আমজনতাকে সতর্ক করেছেন মমতা। জঙ্গলমহলে বাইরে থেকে অচেনা লোকজন আসছে কি না, স্থানীয় বাসিন্দাদেরই সে নিয়ে নজরদারি চালাতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বার্তা, “এলাকায় নতুন কোনও মুখ দেখলে, নতুন কোনও সংগঠন গজিয়ে উঠলে খোঁজ নেবেন। আর কেউ যেন এই এলাকায় অশান্তি বাধাতে না পারে।”
জঙ্গলমহলে অশান্তির অবসানে স্থানীয় মানুষজনকেই কৃতিত্ব দিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “যারা কাপুরুষ, তারাই বন্দুক নিয়ে খুন করে। মেদিনীপুরের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ চলতে দেব না। যারা কলকাতায় বসে বিবৃতি দিচ্ছেন, তাদের বলি, দয়া করে বন্দুকধারী মাওবাদীদের প্রশ্রয় দেবেন না। যারা আত্মসমর্পণ করবে, এলাকায় শান্তি রক্ষা করবে--তাদের ‘ফুল প্রোটেকশন’ দেওয়া হবে।” এক সময়ে তৃণমূলের প্রতি আগের শাসকদল সিপিএমের ‘মাওবাদী-আঁতাতে’র অভিযোগ ফিরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সিপিএমের সঙ্গেই মাওবাদীদের আঁতাতের অভিযোগও তোলেন। এমনকী, নেতাই গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফেরার সিপিএম নেতা-কর্মীরা মাওবাদীদের আশ্রয়ে রয়েছে বলেও লালগড়ের সভামঞ্চ থেকে অভিযোগ করেছেন তিনি। যে অভিযোগ শুনে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সহাস্য প্রতিক্রিয়া, “মাওবাদীদেরই আশ্রয় দেওয়ার কেউ নেই! তারা কাকে আশ্রয় দেবে? মাওবাদীদের সব চেয়ে বড় ছাতা ছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল। কিষেণজি নেই। ছত্রধরের ছাতাও নেই! মাওবাদীরা কার মাথায় ছাতা ধরবে?” বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, “সরকার যদি সব জানেই কে কোথায় আছে, তা হলে ধরছে না কেন!” |
|
|
|
|
|