নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
দিল্লি থেকে উড়ে আসা বিমান যখন বাগডোগরা বিমানবন্দরের মাটি ছুঁল ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দেড়টা। বাইরে অপেক্ষমান মন্ত্রী থেকে কোচ। শহরের বিভিন্ন ক্লাবের টেবল টেনিস খেলোয়াড় থেকে পরিবারের লোকেরা। অগুনতি মানুষ। হাতে ফুল-মালা। কারও হাতে ধরা অভিনন্দন বার্তা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই শিলিগুড়ির দুই অলিম্পিয়ানকে ফুলের মালা পরিয়ে, হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতলেন তাঁরা। শিলিগুড়ির এই জোড়া অলিম্পিয়ান সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং অঙ্কিতা দাস হংকংয়ে সদ্য সমাপ্ত প্রি-অলিম্পিকে সফল হয়ে লন্ডন যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন। হংকং থেকে সোমবার রাতে দিল্লিতে ফিরে মঙ্গলবার সটান নিজেদের শহর শিলিগুড়ি প্রত্যাবর্তন। শিলিগুড়ি তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যের গর্ব দুই অলিম্পিয়ান টিটি প্লেয়ারকে নিয়ে হইচই করবেন না শহরবাসী তা কি হয়? |
এ দিন তাই তাঁদের অভিনন্দন জানাতে বিমানবন্দরেই উপস্থিত ছিলেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সঙ্গে বিধায়ক থেকে শুরু করে পুরসভার চেয়ারম্যান, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সচিব, শিলিগুড়ি টিটি সংস্থার কর্মকর্তারা সকলেই। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তাঁর কোচ মান্তু ঘোষকে জড়িয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন অঙ্কিতা। পাশেই সৌম্যজিৎ। হুড খোলা জিপে চাপিয়ে শহরে ঘোরানো হয় তাঁদের। মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শিলিগুড়ির গর্ব সৌম্যজিৎ-অঙ্কিতা। শীঘ্রই ঘটা করে ওদের নাগরিক সংবর্ধনা জানানো হবে।” পুর কর্তৃপক্ষ ২৬ এপ্রিল তাঁদের সংবর্ধনা দেবে বলে জানান মেয়র। এ দিকে আজই রাতের দিকে দুই প্লেয়ারের বাড়ি গিয়ে অভিনন্দন জানান প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। অঙ্কিতা এবং সৌম্যজিৎ যে দুই ক্লাবের সদস্য সেই ওয়াইএমএ এবং দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবে আজই তাদের গর্বদের সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে শহরের নানা জায়গায় দুই টিটি তারকাকে মিষ্টিমুখ করানোর পালা চলে। অঙ্কিতার পাড়ার ক্লাব রবীন্দ্র সঙ্ঘেও কৃতী দুই খেলোয়াড়কে ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সংবর্ধনা দেওয়ার পর মিছিল করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। দুই ছাত্রছাত্রীর কৃতিত্বে প্রচণ্ড খুশি কোচ মান্তু ঘোষ বলছিলেন, “অলিম্পিকে ফিটনেস ঠিক রাখাটা বড় ব্যাপার। এখন থেকে ওদের অনুশীলনের সময় বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার উপরও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।” |
৩০ এপ্রিল পাতিয়ালায় অলিম্পিকের প্রস্তুতি শিবির শুরু হচ্ছে। সৌম্যজিৎ বললেন, “অলিম্পিক কঠিন লড়াইয়ের জায়গা। অনুশীলন শিবির এবং অলিম্পিকের আগে সফরগুলো প্রস্তুতির কাজে সাহায্য করবে। আশা করি লন্ডনে ভাল কিছু করে দেখাতে পারব।” অঙ্কিতা জানালেন, অলিম্পিকের জন্য শীঘ্রই প্রস্তুতি শুরু করবেন। ৩০ এপ্রিলই শিলিগুড়ি কলেজের কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অঙ্কিতার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাই আপাতত এই কয়েকটা দিন পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চান। অয়েল ইন্ডিয়ায় চাকরির সুযোগও এসেছে তাঁর। গুয়াহাটিতে কোম্পানির দফতরে দু’-এক দিনের মধ্যেই তাঁকে একবার যেতে হবে। পরীক্ষাপর্ব মিটিয়েই তিনি অলিম্পিকের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ নেবেন। সৌম্যজিৎ শিলিগুড়ি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি আবার খেলার জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি একেবারেই নিতে পারেননি।
|