কোথায় হওয়ার কথা ছিল ইডেনে স্টেইন বনাম কালিস, সঙ্গকারা বনাম ব্রেট লি ধুন্ধুমার। উল্টে অন্য রকম ভাঙচুর দেখল ইডেন।
দেখল, প্রকৃতির টি-টোয়েন্টি। বৃষ্টি যদি মাঠ ভাসিয়ে ম্যাচের সাড়ে বারোটা বাজিয়ে থাকে, রাত সাড়ে দশটায় স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ঘোষিত পরিত্যক্ত ম্যাচের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ অবশ্যই বৈশাখী-ঝড়। সন্ধে থেকে সে কী ‘ব্যাটিং’ ঝড়ের! ছাউনি উড়ছে। দেশলাই বাক্সের মতো ভেঙে পড়ছে ক্লাবহাউসের বাঁ দিকে ‘জে’ ব্লকের গ্যালারির উপর তৈরি করা অস্থায়ী কাঠামোর ‘ভেনু অপারেশন সেন্টার’। পরিণাম, কাঠের তলায় চাপা পড়ে তিন জন জখম। সিএবি-র সৌভাগ্য, আরও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। জখম তিনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা কাঠামোর তলায় চাপা পড়েছিলেন, দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ ও স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। |
পুরো ময়দান-জুড়েই চলল ঝড়ের তাণ্ডব। তাতে ম্যাচের দফারফা তো হলই, কপাল পুড়ল কেকেআরেরও। ডেকান ম্যাচ থেকে দু’টো পয়েন্ট আসবেই ধরা হচ্ছিল। যত রাত গড়িয়েছে, তত ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। ইডেনের চারটে সুপার সপার কাজ করছিল পুরোদমে। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনের বাইরে জমে থাকা জল না সরলে নিকাশি-পদ্ধতি কাজ করবে কী করে? দুই আম্পায়ার বিলি বাউডেন ও বিনীত কুলকার্নিকে বিশেষ ভাবতে হয়নি ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে। রাতে সিএবি-র যুগ্মসচিব বিশ্বরূপ দে বললেন, “এত বৃষ্টিতে ম্যাচ করা গেল না।”
এ তো গেল সরকারি বয়ান। নাইট শিবির কিন্তু ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় খুব বেশি অসুখী নয়। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদও ইডেন জুড়ে হাওয়া ছিল, কোনও মতে হলেও পাঁচ ওভারের ম্যাচ হবে। এমনকী নাইট সিইও বেঙ্কি মাইসোরও টুইট করেন, “ম্যাচ হতে পারে।” মাঝে একবার হন্তদন্ত হয়ে দৌড়লেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে। আসলে কম ওভারের ম্যাচ নিয়ে নাইটদের খচখচানি আছেই। ইডেনে আইপিএল ফাইভের উদ্বোধনী ম্যাচেই তো দিল্লি হাসতে-হাসতে দু’পয়েন্ট নিয়ে যায়। ম্যাচটা দাঁড়িয়েছিল ১২ ওভারের। নাইট শিবিরের ধারণা, কম ওভারের ম্যাচ মানে লটারি ছাড়া কিছু নয়। সেখানে যে কোনও দিন যে কোনও টিম যা কিছু করে দিতে পারে। এমনকী ডেকানের মতো পাঁচ ম্যাচে গোল্লা পেয়ে থাকা টিমও। ঝুঁকি নিতে গিয়ে দু’পয়েন্ট চলে যাওয়ার চেয়ে হাতে এক পয়েন্ট রাখাটাই অনেক যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে নাইটরা।
টুর্নামেন্টের অর্ধেক অভিযান শেষে ‘দাদা ভার্সেস খান’-এর যুদ্ধের পটভূমিতে এই প্রথম পয়েন্টের বিচারেও পুণেকে টপকে গেল নাইটরা। বৃষ্টির ম্যাচে ক্লাবহাউস জুড়ে আলোচ্য বিষয়বস্তু একটাই: ৫ মে। মিডিয়ার হুড়োহুড়ি ‘মে ফাইভ ম্যাডনেস’-কে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যে মনে হতে পারে, এ আর ম্যাচ নয়। মিনি-কুরুক্ষেত্র। নিমেষে টিকিট উড়ে যাচ্ছে সিএবি থেকে। দু’বেলা নিয়ম করে মাইক্রোস্কোপের তলায় পড়ছে দু’টো টিম। বৃষ্টি তখনও শুরু হয়নি, সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রেস বক্সে জল্পনা দাদার কীর্তি তো আজ হয়নি। দেখা যাক, গম্ভীর-গর্জন শোনা যায় কি না?
গর্জন উঠল ঠিকই। তবে গম্ভীরের নয়, মেঘের। অঝোর বৃষ্টির চোটে ক্লাবহাউস থেকে হাইকোর্ট প্রান্তের দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল, মাঝে কেউ সাদা পর্দা টাঙিয়ে রেখেছে বুঝি! টস করবেন কী, সঙ্গাকারা-গম্ভীর দৌড়লেন ড্রেসিংরুমের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। ভিআইপি বক্সে টিমের আধা মালকিন জুহি চাওলার মুখে তখন মেঘ জমেছে। আর শাহরুখ তো এলেনই না! বৃষ্টি দেখে আর হোটেল ছেড়েই বেরোননি। যতই সুপার-সপার চলুক ইডেনে। ওই বৃষ্টির পর মাঠে বসে থাকার যুক্তি খুঁজে পাননি ইডেনের হাজার দশেক দর্শকও। ম্যাচ বাতিল ঘোষণার সময় মোটামুটি ফাঁকা ইডেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের জন্য থাকছে কেকেআর কর্তৃপক্ষের সান্ত্বনা পুরস্কার। হয়, এই ম্যাচের টিকিটের টাকা ফেরত। নয়তো কেকেআরের পরের তিনটে হোম ম্যাচের যে কোনও একটা দেখার সুযোগ।
তবে যদি ভাবেন এই ম্যাচ ভেস্তেছে বলে ফোকটে ৫ মে-র পুণে ম্যাচে ইডেনে ঢুকে পড়বেন, সে গুড়ে বালি। কেকেআর কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে জানাচ্ছেন তিনটি হোম ম্যাচ মানে, বেঙ্গালুরু, মুম্বই আর চেন্নাই।
|