দিল্লিতে দুর্ধর্ষ জয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের ঘরের মাঠে গোঁত্তা খেয়ে পড়ল পুণে ওয়ারিয়র্সের উড়ান। চার ওভার বাকি থাকতে আট উইকেটে হার পুণের যোদ্ধাদের বিপর্যস্ত দেখাল মঙ্গলবার।
কুড়ি দিন বয়স হয়ে গিয়েছে পঞ্চম আইপিএলের। নিলামে অংশ না নেওয়া পুণে ওয়ারিয়র্স একটা সময়ে যাদের আইপিএল খেলা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল তারা ভীষণ জনপ্রিয় টিম হিসেবে উঠে আসতে পেরেছে। বলাবলি হচ্ছিল, সৌরভের সেই টিম ইন্ডিয়ার মতো টগবগ করে ফুটছে দলটা। এ দিন সেই ফুটন্ত ভাবটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এত ন্যাতানো তাদের আর কখনও দেখায়নি যা এ দিন দেখাল। মাঠেই কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম, অশোক দিন্দাকে দ্রুত টিমে ফেরাতে হবে। না হলে বোলিংয়ে সেই ঝাঁঝটাই থাকছে না। কিন্তু দিন্দা মনে হচ্ছে না বৃহস্পতিবার ডেকান চার্জার্সের বিরুদ্ধেও নামতে পারবেন বলে।
ম্যাচের পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আমরা যথেষ্ট রান তুলতে পারিনি। এখানকার পিচটা খারাপ নয়। তা ছাড়া মাঠটা ছোট। ১৭০-১৮০ অন্তত লাগত। তেরো ওভার পর্যন্ত আমরা ছয়ের নীচে রানরেট রেখে খেলে গিয়েছি।” ২০ ওভারে ১৪৬ ওঠায় ক্ষুব্ধ পুণে অধিনায়ক কি মাঝপথেই ধরে নেন শক্তিশালী দিল্লি ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে এই পুঁজি নিয়ে কিছু হবে না? না হলে ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি’-র সেই বিখ্যাত জোশটাও যে এ দিন কেমন যেন অদৃশ্য! |
রবিন উথাপ্পাকে বেশি করে তুলে ধরা হচ্ছে ‘ম্যাচ কা মুজরিম’ হিসেবে। ৫৮ বলে ৬০ নট আউট উথাপ্পা। স্ট্রাইক রেট ১০২। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অতি সাধারণই বলতে হবে। মণীশ পাণ্ডে তাঁর জায়গায় এ দিন ওপেন করতে নেমে করলেন ৫৬ বলে ৮০ নট আউট। তিনটে ছয়। উথাপ্পার একটাও ছয় নেই। টুইটারে এমন মন্তব্যও দেখা গিয়েছে, উথাপ্পার স্লো ইনিংসের জন্য সহবাগের সেঞ্চুরি মিস হয়ে গেল! আশ্চর্যের, শেষ চার ওভার বাদ দিলে উইকেট হাতে রয়েছে দেখেও তিনি রান রেট বাড়ানোর কোনও চেষ্টাই করলেন না!
পুণের টিম-একতার জন্য মোটেও ভাল খবর নয় যে, স্বয়ং উথাপ্পা অন্য রকম মনে করছেন। “আমাদের মনে হয়েছিল, পিচটা ১৭০-১৮০ স্কোরের মতো নয়। এখানে ১৪৫-১৫০ ভাল স্কোর। স্ট্র্যাটেজিক ব্রেকের সময় টিমের বার্তাও কিন্তু সে রকমই ছিল।” উথাপ্পার বক্তব্যে পরিষ্কার দু’টো সরণি তৈরি হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। অধিনায়ক বলছেন, যথেষ্ট রান তুলতে পারিনি। অথচ তাঁর এক টিমমেট বলছেন, রান ঠিকই ছিল। সহবাগ একা হারিয়ে দিল। আগের কয়েকটা ম্যাচ ধরে ওপেন করছিলেন উথাপ্পা। এ দিন নামিয়ে দেওয়া হয় চার নম্বরে। ম্যাচ শেষে তিনি বললেন, “আমি ওপেনেই সবথেকে বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু আজ আমাকে বলা হয়েছিল, মিডল অর্ডারে নামতে হবে। টিমের যে রকম প্রয়োজন হবে সে রকমই নামব। কিন্তু আমার পছন্দ জানতে চাইলে বলব ওপেন।”
রাতের দিকে পুণে টিমের হোটেলে গিয়ে যা মনে হল, টিমের মধ্যেও গরিষ্ঠ অংশ উথাপ্পার মন্থর ব্যাটিংকে হারের কারণ হিসেবে ধরছে। ডাগ-আউটে বসে থাকলেন দুরন্ত ফর্মে থাকা স্টিভ স্মিথ। লুক রাইটকে এ দিন প্রথম খেলানো হল। তিনি ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি। তাতেও কেন উথাপ্পা সাহসী হয়ে মারলেন না সেই প্রশ্ন অনেকের মুখে ঘুরছে। এ-ও শুনলাম, একাধিক বার তাঁর কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে রানরেট বাড়ানোর। হারের চেয়েও পুণের হারের ধরনটা তাই বেশি করে চোখে লাগার মতো। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ডেকান চার্জার্স আবার নাইট রাইডার্সের সঙ্গে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়ে এ দিনই পয়েন্টের খাতা খুলল। ডেকানের এক পয়েন্ট পাওয়ার চেয়েও পুণের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেব, কেকেআরের এক পয়েন্ট গেল। কারণ ডেকানের যা চলতি ফর্ম তাতে সব টিমই ধরে রাখছে এই ম্যাচটা জিতবে। সে দিক দিয়ে কেকেআর যে দু’পয়েন্ট তোলার সুযোগ হারাল সেটা সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা অন্যান্য টিমের কাছে বোনাস।
দিল্লিতে যা-যা ঘটেছিল এখানে সবই যেন তার উল্টো ঘটল। দিল্লিতে সৌরভ ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। এ দিনও তিনি যখন বল করতে এলেন, পিটারসেন ক্রিজে। বলাবলি শুরু হল, আজ কি আবার দাদা-র দৌড় দেখা যাবে? কিন্তু আজ সৌরভের দিন ছিল না। প্রথম ওভারে ১২ দেওয়ার পর নিজেকে সরিয়ে নিলেন আক্রমণ থেকে। ব্যাটিংয়েও কিছু করতে পারেননি। আজ ছিল সহবাগের দিন। ফিরতি যুদ্ধে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ৪৮ বলে ৮৭ নট আউট। আজ কি আপনার প্রাক্তন ক্যাপ্টেনের প্রতি প্রতিশোধ নিলেন? সহবাগ বললেন, “বদলার কী আছে? এটা তো শুধু ক্রিকেট ম্যাচ।” বিদেশে ০-৮ টেস্ট বিপর্যয়ের পর ভারত অধিনায়কত্ব নিয়ে এত জল্পনা-কল্পনা। তার মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ঘোড়া ছুটছে। পয়েন্ট টেবিলে টানা এক নম্বর টিম তারা। এ রকম চলতে থাকলে অধিনায়ক সহবাগ নিয়ে একটা হাওয়া তৈরি করে দেবে না চলতি আইপিএল, কে বলতে পারে! |