রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বেআইনি অটো চলতে দেবেন না বলে ‘হুঁশিয়ারি’ দিলেও হুগলির বিভিন্ন রুটে বেআইনি অটো যথারীতি চলছে রমরমিয়েই।
কোথাও তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে অটো চালক-মালিকদের ‘বোঝাপড়া’ আছে বলেও অভিযোগ। আবার কোথাও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে বেআইনি অটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যার জেরে রুটের অটো চালকদের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে জেলায়। এই ঘটনার শুধু অটো চালকেরাই নন, রিকশা চালকেরাও প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। কারণ তাঁদের রুটি-রুজিতেও টান পড়ছে। অটো এবং রিকশা চালকেরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দরবার করছেন বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এই পরিস্থিতিতে বেআইনি অটো রুখতে চুঁচুড়া মহকুমা প্রশাসন জরুরি বৈঠক ডাকছেন।
রিষড়া স্টেশন থেকে নতুনগ্রাম পর্যন্ত রুটে দীর্ঘদিন ধরেই অটো চালু আছে। ওই রুটে বর্তমানে যে ক’টি অটো চলে, তা যাত্রী-সংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট। কিন্তু সম্প্রতি ওই রুটে অন্তত পাঁচটি বাড়তি অটো চলতে শুরু করেছে। রুটের নিয়মিত অটোর চালকদের অভিযোগ, যে নতুন অটোগুলি চলতে শুরু করেছে, তার কোনওটিরই ‘রুট-পারমিট’ নেই। শাসক দলের স্থানীয় কিছু নেতার ‘মৌখিক আশ্বাসে’ অটোগুলি চলতে শুরু করেছে। একই পরিস্থিতি শ্রীরামপুর শহরেও। পুরসভার এক ‘প্রভাবশালী’ কাউন্সিলরের মদতে সেখানে বেআইনি অটো চলছে বলে অভিযোগ।
বেআইনি অটোর জেরে রিষড়ায় নিয়মিত যে অটোগুলি চলে, তাঁদের চালকদের পেটে টান পড়ছে। এই রুটে অটো চালকদের মতোই রিকশা চালকেরাও পড়েছেন মুশকিলে। কারণ, বাড়তি অটো চলায় সওয়ারির সংখ্যা কমে গিয়েছে তাঁদেরও। রিষড়ার নতুনগ্রাম এলাকার ১৫ জন অটো চালক এবং ১৩০ জন রিকশাচালক তাঁদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে হুগলির জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। একই ভাবে তাঁরা বিষয়টি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলার কার্যকারী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “নিয়মের বাইরে গিয়ে যাঁরা অটো চালাচ্ছেন, দলের কথা বলে তাঁদের বরদাস্ত করা হবে না। নিয়মের ঊর্ধ্বে কেউ নন। প্রশাসনকে বলা হবে ব্যবস্থা নিতে।”
চন্দননগর, চুঁচুড়া মহকুমাতেও বেআইনি অটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু রুট পারমিটহীন, লাইসেন্সহীন অটোই নয়, মহকুমা শহরগুলিতে যত্রতত্র রাস্তার উপর অটোর বেআইনি দাঁড়িয়ে থাকাও এখন মারাত্মক সমস্যা। এই নিয়ে প্রশাসন রীতিমতো উদ্বিগ্ন। চুঁচুড়ায় খাদিনা মোড় থেকে ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত বেশ কিছু বেআইনি অটো চলছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। ব্যান্ডেল স্টেশন রোডেও বেআইনি অটোর সমস্যা রয়েছে।
জেলার চন্দননগর, বাঁশবেড়িয়া, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, কোন্নগর এই সব ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে বেআইনি অটো চলাচলের সমস্যা রীতিমতো প্রকট। তা নিয়ে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে চলাচলকারী অটো চালকদের সঙ্গে বেআইনি অটোর চালকদের সংঘাত নিত্য দিনের ঘটনা।
এই সমস্যা নিয়ে সদর জেলা প্রশাসন রীতিমতো উদ্বিগ্ন। সদর মহকুমাশাসক জলি চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমি ইতিমধ্যেই আরটিও-কে অনুরোধ জানিয়েছি। ইতিমধ্যেই যে সব অভিযোগ জমা পড়েছে তা নিয়ে পুলিশ, পুরসভা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।” |