ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ায় পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হল ভদ্রেশ্বর থানার ওসিকে। হুগলি জেলা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি-ও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মঙ্গলবার স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তমাল বসুর নেতৃত্বে দুই মহিলা অফিসার-সহ সিআইডি-র ৬ জনের একটি দল হুগলিতে যায়। দফায় দফায় ওই মহিলাকে জেরা করেন সিআইডি কর্তারা। ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) তথা স্পেশাল আইজি বাসব তালুকদার, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীও চুঁচুড়া মহিলা-থানায় অভিযোগকারিণী ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ সুপার পরে বলেন, “মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে দু’বার তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। ওসি-কে আপাতত ক্লোজ করা হয়েছে।”
সোমবার রাত থেকেই ওই ওসিকে থানায় দেখা যায়নি। মোবাইলে ধরা হলে তিনি বলেন, “আমি নির্দোষ।” পুলিশ জানিয়েছে, ভদ্রেশ্বরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা ওই মহিলার দু’টি বিয়ে। প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধে সমাজবিরোধী কাজকর্মের অভিযোগ আছে। দ্বিতীয় স্বামীও ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হন। সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পান। যুবকের দাবি, সোমবার তাঁকে থানায় ডেকে পাঠান ওসি। তখন তাঁর স্ত্রীর নম্বর নেন ওসি।
মহিলার দাবি, “সোমবার দুপুরে বড়বাবু (ওসি) নিজের মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে ফোন করে থানায় ডাকেন। আমি যেতে না চাইলে জোরাজুরি করেন। তখন আমি অটোয় চেপে থানার দিকে রওনা হই। মাঝপথে পুলিশের একটি গাড়ি পথ আটকায়। ওই গাড়িতে করে আমাকে থানার পিছনে বড়বাবুর আবাসনে পৌঁছে দেওয়া হয়।” বছর সাতাশের ওই মহিলার অভিযোগ, “ঘরে যেতেই বড়বাবু আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। বলেন, কথা না শুনলে পুলিশ স্বামীকে ফের ধরলে তাঁর বিপদ হবে। এরপরেই বড়বাবু ধর্ষণ করেন।”
সোমবার চন্দননগর হাসপাতালে নিজেই ভর্তি হয়েছিলেন ওই মহিলা। সেখানে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। রাতেই জেলার এএসপি (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা, এসডিপিও (চন্দননগর) তথাগত বসু তদন্তে যান। রাতে এএসপি-র কাছে ওসি-র বিরুদ্ধে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ তুলে দেন ওই মহিলা। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালেও মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে ফের পরীক্ষা হয়। দুই হাসপাতাল সূত্রেই খবর, প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণের ‘প্রমাণ’ মেলেনি। সিআইডি ও জেলা পুলিশ অফিসারদের দাবি, মহিলার বক্তব্যে ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে। তাঁর দাবি, ওসি তাঁকে মোবাইলে ফোন করে থানায় ডেকে পাঠান। মহিলার কললিস্টে ওসি-র নম্বর মেলেনি। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী যে পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি যেখানে কর্মরত তার পাশাপাশি দ্বিতীয় ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’কে দিয়ে তদন্ত করাতে হয়। হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, নিয়ম মেনে সিআইডি তদন্তে নেমেছে। |