মাওবাদীদের দেওয়া সময়সীমা যত শেষ হচ্ছে, বিভ্রান্তি ততই বাড়ছে। সুকমার অপহৃত জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননকে অপহরণের পর কেটে গিয়েছে তিন দিন। তাঁর মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মাওবাদীদের দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ বুধবার বিকেল পাঁচটায়। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে ছত্তীসগঢ় সরকারের তরফে দু’জন মধ্যস্থকারীর নাম ঘোষণা ছাড়া আর তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
এর মধ্যে মঙ্গলবার মাওবাদীরা জানায়, অ্যালেক্স গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর হাঁপানির সমস্যা রয়েছে বলে আগেই মাওবাদীদের এক আবেদনে জানান তাঁর স্ত্রী আশা। মঙ্গলবার উদ্বিগ্ন আশা ফের বলেন, মাওবাদীরা অন্তত স্বামীর কোনও অডিও বা ভিডিও টেপ পাঠাক এবং দ্রুত ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।
অ্যালেক্সের জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদিবাসী মহাসভার সভাপতি এবং সিপিআই নেতা মণীশ কুঞ্জমের হাতে ওষুধ পাঠিয়েছে সরকার। তিনি সুকমার চিন্তল গুফা থেকে মোটরবাইকে গভীর জঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত পর্যন্ত তাঁর ফেরার খবর মেলেনি। তিনি ফিরলে অ্যালেক্সের অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। তবে মণীশ পৌঁছলেই অ্যালেক্সকে সেখান থেকে সরানো হবে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। রাজ্যের দাবি, অ্যালেক্স সুরক্ষিত। মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ মাওবাদীদের দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানান। ছোট নজরদারি বিমান পাঠিয়ে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়ে মঙ্গলবার দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়।
সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য মাওবাদীদের তরফে যে তিন জনের নাম সোমবার রাতে প্রস্তাব করা হয়, তার মধ্যে ছিলেন মণীশ কুঞ্জমও। এ ছাড়া, মধ্যস্থ হিসেবে মাওবাদীরা আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বি ডি শর্মার নাম জানায়। প্রশান্ত মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি নন। রাজ্য যে যে মধ্যস্থতাকারীদের নাম ঘোষণা করেছে, সেই সুযোগ্য মিশ্র (ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যসচিব) এবং নির্মলা বুচ-কে (মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যসচিব) মাওবাদীরা মানবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। মাওবাদীদের তরফে মধ্যস্থ হিসেবে বি ডি শর্মার নাম উঠলেও তিনি ‘সরকারি ভাবে’ কিছু জানেন না। এ দিন বিকেলে তিনি হায়দরাবাদ থেকে দিল্লি পৌঁছন। আনন্দবাজারকে রাতে ফোনে বলেন, “ছত্তীসগঢ় সরকার বা মাওবাদী কেউই আমায় সরাসরি কিছু বলেনি। সংবাদমাধ্যমের কাছেই যা জানার, জেনেছি।” তিনি কী ভাবছেন? শর্মার জবাব, “এই বিবাদ মেটাতেই হবে। সাংবাদিক বৈঠক করব বুধবার। বৃহস্পতিবার রায়পুর যেতে পারি। অ্যালেক্সের শরীর বেশ খারাপ। অবিলম্বে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত।” দক্ষিণ বস্তার ডিভিশনাল কমিটির সচিব বিজয় মাড়কাম জানান, অপর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অধ্যাপক হরগোপালের নাম বাছা হয়েছে।
ছত্তীসগঢ়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানকিরাম কাঁওয়ার বলেন, “অ্যালেক্সকে নিয়ে মাওবাদীরা ছত্তীসগঢ়েই আছে। ওঁকে যেখানে রেখেছে, তার কাছে পাহাড়-নদী আছে। ওড়িশা, অন্ধ্র সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” প্রচণ্ড গরমে অ্যালেক্সের শরীর থেকে জল বেরিয়ে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই তাঁর মুক্তির দাবি তীব্র হচ্ছে। এ দিন ওই অঞ্চলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ ছিল। |