সংসদের অধিবেশন চলাকালীনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য কংগ্রেসকে আর্জি জানাল বিজেপি। লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ আজ বলেন, “জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলেও তার প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু হওয়া উচিত। অথচ শাসক দলের তরফে এখনও কোনও প্রস্তাব আসেনি। তাই বিজেপিও নিজেদের বা এনডিএ-র মধ্যে আলোচনা শুরু করতে পারেনি। সংসদের অধিবেশন আজ থেকে শুরু হয়েছে। এ সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা দিল্লিতে থাকেন। ফলে এই নিয়ে আলোচনা শুরুর এটাই আদর্শ সময়।”
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস যতক্ষণ না নিজেদের তাস খেলছে, ততক্ষণ বিজেপিও তার কৌশল প্রকাশ্যে আনবে না। কিন্তু কংগ্রেসের ‘নীরবতা’ই ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। তাঁরা মনে করছেন, কংগ্রেসের সামনে এখন দু’টি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, বিজেপিকে ছাড়াই মমতার মতো শরিক এবং মুলায়ম-মায়াবতীর মতো সমর্থনকারীদের সঙ্গে নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে রাইসিনা হিলে পাঠানো। মমতা-মুলায়মদের সমর্থন না পেলে তখনই কংগ্রেসকে দ্বিতীয় বিকল্পের কথা ভাবতে হবে। তখনই বিজেপির উপরে নির্ভর করতে হবে তাদের। সে ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে এগোনোর কৌশলও নিতে পারে তারা। অরুণ জেটলির মতো নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে দু’বছরের মাথায় লোকসভা ভোটের নিরিখে দেখতে হবে। তাই বিজেপি এখন থেকেই আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোর কৌশল নিয়েছে। এনডিএ-শরিকদের পাশাপাপশি জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়ক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো নেতাদের সঙ্গে পেতে চাইছে বিজেপি। দলের এক নেতার মতে, গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভৈঁরো সিংহ শেখাওয়াতকে নিয়ে হাত পুড়েছিল দলের। এ বারে আর সেই ভুল করা হবে না। বরং সম-মনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে ঐকমত্য রচনা করেই এক জনকে প্রার্থী করা হতে পারে। যে হেতু কোনও নির্দিষ্ট নাম নিয়ে কথা শুরু হয়নি, তাই সেই ব্যক্তি রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক, বিজেপির প্রার্থী না অন্য দলের, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা কৌশল, তা হল, কংগ্রেসের দেওয়া প্রার্থীকে সমর্থন নয়। দলের এক নেতার কথায়, “এমন প্রার্থী দেওয়া হবে, যিনি জিততে পারেন। তবে যদি তিনি জিততে না-ও পারেন, তা হলেও লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেসকে হারাতে আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে রাখাই আসল উদ্দেশ্য।”
জয়ললিতার দলের সাংসদ মৈত্রয়ন আজ বলেন, “রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি দলের প্রার্থী শুধু শাসক দলই স্থির করবে, তা মানছি না। এমন প্রার্থীকে সমর্থন করব, যাতে ভোটের অঙ্কে কংগ্রেসকে তাঁকে মেনে নিতে হয়।” বিজেপির একটি অংশ আবার চাইছে, কংগ্রেস আলোচনায় বসলে তাদের প্রার্থীকে সমর্থনের বদলে উপরাষ্ট্রপতি পদটি চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু রাজ্যসভায় এমনিতেই সংখ্যালঘু শাসক দল। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের প্রার্থীকে উপরাষ্ট্রপতি করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান করার নিয়ে কংগ্রেস কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিজেপি-সহ এনডিএ নেতারা মনে করছেন, এখনও পর্যন্ত যে নামগুলি ভেসে আসছে, তাদের কেউই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সপা নেতা সাহিদ সিদ্দিকি এত দিন আব্দুল কালামের নাম তুললেও আজ মুলায়ম সিংহ তা অস্বীকার করেন। এরই মধ্যে লালুপ্রসাদ আজ সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির নাম তুলে ধরেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য। সংসদের সেন্ট্রাল হলে শরদ পওয়ার তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দেন, প্রধানমন্ত্রী যখন উত্তর ভারত থেকে হয়েছেন, রাষ্ট্রপতি দক্ষিণ থেকে হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে দেবগৌড়া উপযুক্ত প্রার্থী। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব এখনই এই বিষয়ে তাঁদের মতামত জানাতে চান না। কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেই মমতা তাঁর মত জানাবেন।
সব দলই নিজেদের মতো করে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী কী ভাবছেন, সে দিকেই এখন তাকিয়ে বাকিরা। |