|
|
|
|
‘ভুয়ো’ ই-মেল, তরুণীর বিরুদ্ধে বিডিও-র নালিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
বাড়ির লোকেরা জোর করে এক নাবালিকার বিয়ে ঠিক করেছে। ই-মেলে এই খবরের সূত্র ধরে নাবালিকার সন্ধান করতে গিয়ে সোমবার দিনভর কার্যত নাকাল হতে হল বীরভূমের প্রশাসন ও পুলিশকে। দিনভর দৌড়ঝাঁপ শেষে নাবালিকার সন্ধান পাওয়া গেলেও বাবা-মা’র পাশে দাঁড়িয়ে ময়ূরেশ্বর ১ বিডিও-কে সে জানিয়ে দিয়েছে, ভুল খবর। আদৌ তার বিয়ে ঠিক করা হয়নি। শেষে হয়রান করার জন্য বিডিও বাবুলাল মাহাতো মঙ্গলবার পুলিশের কাছে ওই ই-মেল প্রেরকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সিউড়ির পূজা মণ্ডল নামে এক তরুণীর পরিচয়ে সোমবার বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাকে ওই ই-মেলটি পাঠানো হয়। তাতে ওই তরুণী জানান, ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার একটি গ্রামে তার মামারবাড়ি। সেই এলাকার বছর সতেরোর এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তার সম্প্রতি বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই নাবালিকা জানিয়েছে, গুজরাটের কাঁদি থানা এলাকায় তাঁর দিদির বিয়ে হয়েছে। সেখানকার এক যুবক মাস ছ’য়েক আগে নাবালিকার বাড়িতে এসে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এখন তার অমতে বাড়ির লোকজন সেই যুবকের সঙ্গেই তার বিয়ে ঠিক করেছে। আগামী ২৯ এপ্রিল গুজরাটে তাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। সাত সকালে এই ই-মেল পড়ে জেলাশাসক বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কৃষ্ণা মাড্ডিকে। ই-মেলে তরুণীর মোবাইলের নম্বরের উল্লেখ ছিল। কৃষ্ণাদেবী সেই মোবাইলে ফোন করে তরুণীকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। তিনি জেলাশাসকের অফিসে ‘ফ্যাক্স’ করেও অভিযোগ জানান। এরপর অতিরিক্ত জেলাশাসক ময়ূরেশ্বর ১ বিডিও বাবুলাল মাহাতোকে ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পাশাপাশি গুজরাটের পুলিশকেও কাঁদি থানা এলাকায় নাবালিকার জামাইবাবুর বাড়িতেও খোঁজ করতে বলা হয়।
এরপরেই প্রশাসনের হয়রানি বাড়ে। বিডিও জানান, ই-মেলে নাবালিকার যে ঠিকানা রয়েছে, ওই এলাকায় গিয়ে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশকেও তিনি নাবালিকার সন্ধান করতে বলেন। এলাকার স্কুলগুলিতে কয়েক বছরের মধ্যে ওই নামের কোনও ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে কি না তা সন্ধান করে দেখতে গিয়ে ও নাবালিকার সন্ধান পাওয়া যায়। তবে তার বাড়ি অন্য গ্রামে। বিডিও-র ডাকে সোমবার বিকেলে ওই নাবালিকা ও তার বাবা-মা ব্লক অফিসে যান। বিডিও বলেন, “ই-মেলের কথা শুনে তাঁরা দাবি করেন মিথ্যা অভিযোগ। মোবাইল ফোনে ওই তরুণীর সঙ্গে নাবালিকার কথাও বলিয়ে দিই। ফোনে নাবালিকা ওই তরুণীকে চেনে না বলেও দাবি করে।” এরপর থেকেই ওই মোবাইল ফোনটি স্যুইচ অফ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবারেও ফোনটি চালু করা হয়নি। ওই নাবালিকার বাবা বলেন, “বড়মেয়ের বিয়ে হয়েছে সাইথিঁয়ায়। পরে জামাই কর্মসূত্রে কাঁদিতে চলে যায়। সেখানে আমরা ছোট মেয়েকে নিয়ে দিন কুড়ি বেড়িয়ে সম্প্রতি ফিরেছি। কিন্তু এই মেয়ের বিয়ে নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা।” বিডিও-কে তিনি লিখিত ভাবে এ কথা জানিয়েও দেন। বিডিও জানান, গুজরাট পুলিশও সন্ধান চালিয়ে কোনও খবর পায়নি। তাই মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রান করার জন্য ওই ই-মেল প্রেরকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে অনর্থক প্রশাসনকে হয়রান করা হয়েছে। কী উদ্দেশে, কারা এই কাজ করেছে- তা খোঁজ করতে বলা হয়েছে।” পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “আমার কাছেও ওই ই-মেলটি এসেছিল। ই-মেল ও ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ ওই ই-মেল প্রেরকের সন্ধান চালাচ্ছে।” |
|
|
|
|
|