প্রশাসনিক উদাসীনতায় ক্ষোভ বাড়ছে বোলপুরবাসীর
থমকে লালপুল সম্প্রসারণ, যানজটই নিয়তি
০১০ সালে এক মৃত দলীয়কর্মীর বাড়িতে যাওয়ার পথে এখানেই দু’ঘন্টা যানজটে আটকা পড়েছিলেন মুকুল রায়। বোলপুর শহরের অতি সংকীর্ণ লালপুলের যানজটেই তখন নাকাল হয়েছিলেন মুকুলবাবু। সময় বদলেছে। রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এসেছে। সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এখন দেশের রেলমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু লালপুল যে তিমিরে ছিল, আজও আছে সেখানেই।
বোলপুর শহরের যানজট দীর্ঘদিনের সমস্যা। কোথাও পথ দখল করে ব্যবসা কোথাও দোকানদারদের রাস্তার ধারে মালপত্র নামিয়ে জবরদখল, রাস্তাঘাটে যত্রতত্র বাইক, গাড়ি, সাইকেল রেখে দেওয়া এ সবই বোলপুর শহরের যানজটের চেনা ছবি। সংকীর্ণ লালপুল, শহরের সেই যানজটের চেনা ছবিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যার জেরে নাকাল স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ পথচারী, যানবাহন চালক থেকে নানা দফতরের কর্মীরা। লালপুলে ঘণ্টা দু’য়েকের যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বোলপুর-সহ লাভপুর, সাঁইথিয়া, কীর্ণাহার এবং পাশের মুর্শিদাবাদে, বর্ধমানের কাটোয়া, নদীয়ার কৃষ্ণনগর প্রভৃতি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা-- লালপুল।
বোলপুরে লালপুলে এ ভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন সাধারণ মানুষ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
ওই সংকীর্ণ লালপুলের উপর দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার যান চলাচল করে। কিন্তু পুরবাসিন্দারা এবং শহরের উপর নানা ভাবে নির্ভরশীল নাগরিকদের হাজারো আবেদনেও এবং লালপুল সম্প্রসারণে বহু আলোচনা, চিঠি, বিক্ষোভ হয়ে গেলেও মেটেনি লালপুল-সমস্যা। এমনকী এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও সমস্যা সমাধানের আর্জি জানালেও আজও পর্যন্ত বোলপুরবাসীর ‘লালপুল-যানজট’ থেকে মুক্তি মেলেনি। এ দিকে দিনে দিনে লালপুলকে ঘিরে অবস্থা জটিল থেকে জটিল হচ্ছে। বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান, কংগ্রেসের তপনকুমার সাহা-র অভিযোগ, “আগের দুই রেলমন্ত্রী-- লালুপ্রসাদ যাদব এবং মমতা বন্দ্যেপাধায়কে লিখিত ভাবে সমস্যাটির কথা পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউই কথা রাখেননি। লালপুল-সমস্যার সমাধান হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, ২০০৮-১০ পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবধানে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং কেন্দ্রের রেলমন্ত্রককে বারবার জানানো হলেও কোনও কাজ হয়নি। এমনকী লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বোলপুরের তৎকালীন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় রেলমন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করলেও লালপুলের সম্প্রসারণ আজও শুরু হয়নি।
পূর্ব রেলের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের বোলপুর বিভাগের রেললাইনের উপরে রয়েছে লালপুল। ২০০৪ সালের অক্টোবরে সোমনাথবাবু তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে চিঠি দিয়ে লালপুলের সম্প্রসারণের প্রয়োজনের কথা জানিয়েছিলেন। এমনকী রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের মাধ্যমে লালপুল ও রেলের স্কেচম্যাপও তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, রেল এবং রাজ্যের সমন্বয়ের অভাবে লালপুল সম্প্রসারণের কাজ আর এগোয়নি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে আশা জেগেছে বোলপুরবাসীর মনে। রাজ্যে সরকারের বদল হয়েছে। রেলমন্ত্রকও তৃণমূলের। ফলে লালপুল সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। এমনকী বোলপুর পুরসভার ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল তো বটেই, পুরসভার সিপিএম, কংগ্রেসের বিরোধী কাউন্সিলররাও সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। লালপুলের বর্তমান অবস্থা দেখে শহরবাসীর আশঙ্কা, এখনই এর সমাধানে সবাই একযোগে এগিয়ে না এলে যানজটে আগামী দিনে শহর স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। এ দিকে শহরবাসীর আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে নতুন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই তাঁরা দিল্লিতে মন্ত্রীর কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়ে এসেছেন।
বোলপুরের পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের কাউন্সিলর মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “উৎসব অনুষ্ঠান থেকে স্বাভাবিক কাজের দিন, সবদিনই যানজটে নাকাল হয়ে পড়া বোলপুরের চেনা ছবিতে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা দূর না হলে সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। বোলপুর পুরপ্রধানকে আমরা লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।” পুরপ্রধান, তৃণমূলের সুশান্ত ভকত বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এ নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।” প্রসঙ্গত, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলপুর রেল স্টেশনে প্রান্তিক-সিউড়ি রেলপথের শিলান্যাসে এসে লালপুল সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও সে বিষয়ে কোনও উদ্যোগ না দেখা দেওয়ায় এ বার তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ফের শরণাপন্ন হল মুখ্যমন্ত্রীর। সেই সঙ্গে বর্তমান রেলমন্ত্রীকেও তাঁরা দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ আসলেও লালপুল কবে বদলাবে সেই প্রতিক্ষায় এখন শহরবাসী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.