ফের এক ভাগচাষির আত্মহত্যার ঘটনায় ঝড়বৃষ্টিতে ধান নষ্টের অভিযোগ উঠল। যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার পিছনে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কও থাকতে পারে।
মঙ্গলবার ভোরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামের বাসিন্দা নাড়ু মাঝির (২৫)। পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে মাঠ থেকে ফিরে তিনি কড়িকাঠে গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েছিলেন। কিন্তু গামছাটি ছিঁড়ে যাওয়ায় তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়নি। স্থানীয় সিঙ্গত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছিল। তবে কী কারণে এই ঘটনা তা নিয়ে তবে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
নাড়ুর ভাই মিঠুন মাঝির দাবি, “দাদা পাঁচ বিঘে জমিতে ভাগে বোরো চাষ করেছিলেন। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সমস্ত ধানই নষ্ট হয়ে যায়। মহাজনদের কাছ থেকে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তার উপরে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বাবা গদাই মাঝির গলব্লাডার স্টোনের অস্ত্রোপচার করাতেও ধার করতে হয়। প্রায় ৪৫ হাজার টাকার দেনা শোধ করতে তাগাদা দিচ্ছিল মহাজনেরা। দাদা ভেবেছিলেন, ধান বিক্রি করে দেনা শোধ করবেন। ধান নষ্ট হওয়ায় তিনি পাগলের মতো হয়ে যান।”
স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, হুগলির ডানকুনিতে মাল পরিবহণের কাজ করতেন নাড়ু। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আবার নিজের স্ত্রীকেও সন্দেহ করছিলেন। তাই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি চলছিল। সম্প্রতি তিনি গাজনের জন্য বাড়ি এসেছিলেন। তখনই অশান্তি চরমে ওঠে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরী ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের সুজিত দত্তের দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে চাষের কোনও সম্পর্ক নেই। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অশান্তির জেরেই ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন।”
মঙ্গলকোটের বাসিন্দা হলেও, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু ঘটায় নাড়ুবাবুর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছে বর্ধমান থানা। তবে থানা সূত্রেও বলা হয়েছে, ওই চাষি পারিবারিক অশান্তির কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন। চাষে বিপর্যয় এবং ঋণে জড়িয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর বাড়ির লোকেরাও পুলিশকে জানাননি। যদিও স্থানীয় কংগ্রেসের নেতা দীপক ঘোষ বলেন, “নাড়ুকে আমি চিনি। ও খুব কষ্ট করে চাষ করত। ঋণের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। ওর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমরা বিডিও-র কাছে আবেদন জানাব।”
যে কারণেই নাড়ুর মৃত্যু হয়ে থাক, মঙ্গলকোটের ওই এলাকায় অনেকেই চাষে মার খেয়েছেন বলে দাবি তাঁর কিছু প্রতিবেশীর। বর্ধমান মেডিক্যালে এসে তাঁর পড়শি নারায়ণচন্দ্র সাহা, প্রণব মাঝিরা বলেন, “আমাদের এলাকায় চাষিদের ঋণ করেই চাষ করতে হয়। একে গত বারের ধান বিক্রি হয়নি। এ বারের ফলনও মার খেয়েছে। আমাদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। তবে সে কারণে নাড়ু আত্মহত্যার চেষ্টা করবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি।”
দুর্ঘটনায় জখম। পথ দুর্ঘটনায় জখম হলেন এক যুবক। মঙ্গলবার অন্ডালে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার পরে আহতকে দুর্গাপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। |