ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে প্রায় চার মাস আগে। দিন কয়েক পরেই জেলার স্কুলগুলিতে শুরু হবে দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট। কিন্তু জেলার অনেক স্কুলে এখনও সরকারি পাঠ্যপুস্তক পৌঁছয়নি। যার ফলে অসুবিধায় পড়েছে বহু পড়ুয়া।
বই কেন পাওয়া যাচ্ছে না, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের এই প্রশ্নে জর্জরিত হচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে অবশ্য জানা যায়, কত বই প্রয়োজন, সে ব্যাপারে যে সব জেলা ভুল হিসেব পাঠিয়েছিল, তারা এই সমস্যায় পড়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ইংরেজি, গণিত, পরিবেশ পরিচয় ও ইতিহাস বই দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ ইংরেজি, গণিত ও পরিবেশ পরিচয়। কিন্তু কেতুগ্রাম, মেমারি, মঙ্গলকোট, পানাগড়, গলসি, কাঁকসার নানা স্কুলে এখনও সব বই পৌঁছয়নি। বেশ কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা স্কুলে এক-এক রকম পাঠ্যপুস্তক অমিল।
সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, বেশির ভাগ স্কুলই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ইতিহাস বই যায়নি। পাশাপাশি, কোনও কোনও স্কুল ইংরেজি, গণিত বা পরিবেশ পরিচয় পুস্তক পায়নি। মঙ্গলকোটের মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যায়তনে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য ইতিহাস ও ইংরেজি, সপ্তম শ্রেণির জন্য গণিত, অষ্টম শ্রেণিতে গণিত ও পরিবেশ পরিচয়ের বই পড়ুয়া সংখ্যার তুলনায় কম এসেছে। ফলে একই শ্রেণিতে কয়েক জন সব বই পেলেও বাকিরা বঞ্চিত হয়েছে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াজেদ আনসারি বলেন, “আগে এলে আগে পাবে, এই পদ্ধতিতে বই দেওয়া হয়েছে। বাকি বই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে।”
মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির (ইউনিট ১) স্কুলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে গণিত ও ইতিহাস এবং অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বই পৌঁছয়নি। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক জিম্বো সিংহ জানান, বইগুলি যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সে জন্য সর্বশিক্ষা দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে। গলসি, কাঁকসার বিভিন্ন স্কুল এখনও ইতিহাস বই পায়নি বলে জানা গিয়েছে।
ক্লাস শুরুর পরে চার মাস কেটে গেলেও পড়ুয়াদের হাতে বই পৌঁছল না কেন? প্রসাসন সূত্রে জানা যায়, শুধু বর্ধমান নয়, অনেক জেলাতেই এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। অন্য বছর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি শুরু হয় জুন-জুলাইয়ে। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। সর্বশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “কত বই প্রয়োজন, তা প্রতিটি জেলাকে ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে বলেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। যে সব জেলা বইয়ের হিসেবে দিতে ভুল করেছে, তারাই এই সমস্যায় পড়েছে।”
মঙ্গলকোটের নিগনে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আব্বাস, কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবানীশঙ্কর ঘোষেরা বলেন, “পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, সকলেই জানতে চাইছেন, বই কবে আসবে। আমরা কোনও উত্তর দিতে পারছি না।” বেশির ভাগ স্কুলে মার্চে প্রথম ইউনিট টেস্ট শেষ হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াই পরীক্ষা দিতে হয়েছে অনেক পড়ুয়াকে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট শুরু হবে। পরিস্থিতি যা, তাতে এ বারও পড়ুয়াদের বই ছাড়াই পরীক্ষা দিতে হবে। পানাগড়ের অভিভাবক উত্তম দাস, কাঁকসার অনিন্দিতা রায়দের ক্ষোভ, “অদ্ভূত একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই।” অনেক শিক্ষক আবার বলছেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরাও সে রকম ভাবেই খাতা দেখেছি।”
এমন পরিস্থিতি কবে কাটবে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি। জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নিলীমা গিরি বলেন, “সর্বশিক্ষা দফতর থেকে জেলার নানা চক্রে বই পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে যা বলার তারাই বলতে পারবে।” সর্বশিক্ষা দফতরের জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক সুদেষ্ণা মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার অবশ্য দাবি, “বই নিয়ে বেশির ভাগ সমস্যা মিটে গিয়েছে। তবে ইতিহাস বই নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। আশা করছি, সেই সমস্যাও শীঘ্রই মিটে যাবে।” ইতিমধ্যে ইতিহাস বই না পাওয়ার কথা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কয়লা বাজেয়াপ্ত। অভিযান চালিয়ে মদনপুর অঞ্চলের একটি গুল কারখানা থেকে প্রচুর কয়লা বাজেয়াপ্ত করল বারাবনি থানার পুলিশ। আটক করা হয়েছে প্রায় দশ টন অবৈধ কয়লা বোঝাই একটি লরি। এছাড়া মজুত করে রাখা ২৫ টন কয়লাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কারখানার দুই মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |