আছেন, তবে প্রায় অশরীরী
না দেখলে লোকে ভুল যায়।
কথাই আছে, ‘চোখের বাইরে মানে মনেরও বাইরে’।
অথচ পার্টি অফিসে গেলে যদি বা এক কাউন্সিলরের দেখা মেলে, অন্য জনকে গত পাঁচ বছরে দেখেছেন বলে মনেই করতে পারছেন না অনেকে।
দ্বিতীয় জন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর গগনচন্দ্র ঘোষ পুরসভার চেয়ারম্যান। আইনজীবী মানুষ। কথার মারপ্যাঁচে নানা প্যাঁচপয়জার কষতে পারেন। তিনি যে ‘ডুমুরের ফুল’ এ হেন অভিযোগ শুনেই ঝটিতি জবাব, “কতটা উন্নয়ন করেছি সেটাই আসল।”
‘উন্নয়ন’? শুনে হেসেই ফেলছেন ওয়ার্ডের বহু বাসিন্দা। তার মধ্যে বিরোধী তৃণমূল নেত্রী সোনা চট্টোপাধ্যায় যেমন আছেন, ছাপোষা লোকেরাও আছেন।
এই ওয়ার্ডেই বেনাচিতির একাধিক ঘিঞ্জি এলাকা। সমস্যাও প্রচুর। ধুনুরা প্লট, নিবেদিতা প্লেস, লিঙ্ক রোড, বেনাচিতি গ্রাম, মহিস্কাপুর পথ, নবপল্লি, দেবীনগর, সত্যজিৎ পল্লি, ক্ষুদিরাম নগর ও গোঁসাইনগর। তারামা পাড়া, ক্ষুদিরাম পল্লি বা গোঁসাইনগরের কাউন্সিলরকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রমোদ বাগচি, উদয় মণ্ডলদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে এলাকায় তাঁর দেখা মেলেনি। তৃণমূলের সোনাদেবী মতে, “কাউন্সিলরের উচিত এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নজর দেওয়া। কিন্তু ওই তিন পাড়ায় কোনও উন্নয়ন হয়নি।”
বাকি সব এলাকায় কাজ একেবারে হয়নি, তা নয়। এক সময় প্রধান সমস্যা ছিল নিকাশি। সঙ্গে মশার উপদ্রব। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু পাকা নর্দমা হওয়ায় কিছুটা সুরাহা হয়েছে। রাস্তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ছিল। কয়েক বছর আগে কংক্রিটের রাস্তা হওয়ায় তা-ও তেমন নেই। পানীয় জলের সমস্যাও আগের থেকে কমেছে। অনেক জায়গায় আবার কাজ হলেও রয়ে গিয়েছে খুঁত। সত্যজিৎপল্লি ও ভগৎ সিংহ পল্লির মাঝে যেমন চওড়া নর্দমা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই নর্দমার দেওয়াল হেলে গিয়েছে, কংক্রিট উঠে রড বেরিয়ে গিয়েছে কোথাও। কালভার্ট তৈরি না হওয়ায় দুই পাড়ার যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। এলাকার শ্যামল বাদ্যকর, বিপ্লব বসুদের আক্ষেপ, “রাস্তা থেকে কালভার্ট উঁচু। বিশেষ করে সাইকেলে যাতায়াতে অসুবিধা হয়। কাজের সময় একটু দেখে নিলে এই সমস্যা হত না।”

১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জমে আবর্জনা।

১৬ নম্বরে ভাঙা কালভার্ট।
গগনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এক সঙ্গে অনেক কাজ হওয়ায় সামান্য এ দিক-ও দিক হতে পারে। কিন্তু সার্বিক বিচারে কাজ ভাল হয়েছে।” তাঁর ফিরিস্তি, এলাকায় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েছে, গড়া হয়েছে খেলার মাঠ। এখনও কিছু রাস্তা পাকা করার কাজ বাকি। তা-ও দ্রুত শেষ করা হবে।
নিম্নমানের কাজ, অর্থাৎ ‘সামান্য এ দিক-ও দিক’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও।
ঋষি অরবিন্দ নগর, রবীন্দ্রপল্লি পূর্ব ও পশ্চিম, টেগোর পথ, শিবতলা, শরৎপল্লি, সুকান্ত পল্লি পূর্ব ও পশ্চিম এবং ধান্ডাবাগ গ্রাম নিয়ে ১৬ নম্বর। সুকান্তপল্লির সত্যেন্দ্র মিশ্রের কটাক্ষ, “ভোট আসছে। তাই আমাদের পাড়ার রাস্তায় মোরাম বিছানো শুরু হয়েছে। নর্দমার উপরে কালভার্ট তৈরি করা হয়েছিল খারাপ সামগ্রী দিয়ে। কংক্রিট ধসে ভিতরের রড বেরিয়ে পড়েছে।” ধান্ডাবাগের পঞ্চানন সিংহ আবার অভিযোগ করেন, “এখানকার আদি গ্রাম সিংহপাড়ায় গত ১৫ বছরে কোনও উন্নয়নই হয়নি।”
বিরোধী নেত্রী, ব্লক তৃণমূলের অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রাস্তায় জলের ট্যাপ ঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। জলের ধারা খুব সরু। বিপিএল তালিকায় কারচুপি হয়েছে। পরিকল্পনা না করে রাস্তায় আলো বসানোয় মানুষের সুবিধা হয়নি।” কংগ্রেসের জেলা নেতা, দুর্গাপুর ২ ব্লক সম্পাদক অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অনেক জায়গায় নর্দমার তলদেশ নিয়ম মেনে তৈরি না হওয়ায় জল জমছে। বাড়ছে মশা উপদ্রব।”
কাউন্সিলর অবশ্য দাবি করেন, পানীয় জলের অনেকটাই মিটেছে। আগে কুয়ো-পুকুরের জলে পেটের রোগ হত। এখন পাইপের জল মেলায় বাসিন্দারা রেহাই পেয়েছেন। কংক্রিট ও পিচের রাস্তা হয়েছে। হেমশিলা মোড়, রবীন্দ্রপল্লি মোড় ও ডিএসপি টাউনশিপ থেকে ধান্ডাবাগে ঢোকার মুখে কালভার্ট এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের তিনটি বাড়ি তৈরি হয়েছে। ঢেলে সাজা হয়েছে নিকাশি। একটি পুকুর সংস্কার, তিনটিতে গার্ড ওয়াল, রাস্তায় আলো, কমিউনিটি শৌচাগার হয়েছে। সাঁওতালপাড়ায় গড়া হয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র। শুধু একটাই আক্ষেপ, “রায়না পুকুরে তিনটি ঘাট করতে পারলে ভাল হত।”
ওয়ার্ডবাসীর মূল আক্ষেপ কিন্তু অন্য। তা হল, কাউন্সিলর সব সময় পার্টি অফিসে বসে থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সমস্যা হয়। বিশেষত বিরোধীদের পক্ষে। স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক রামবিলাস সাউয়ের কথায়, “ওঁদের পার্টি অফিসে আমাদের মতো বিরোধীদের যেতে সঙ্কোচ হয়। অথচ উপায়ও থাকে না!”
উমাদেবী অবশ্য বলেন, “রোজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্টি অফিসে থাকি সত্যিই। কিন্তু অনেকেই তো নানা কাজে সকালে আমার বাড়িতে আসেন!”

নজরে নগর
ওয়ার্ড ১৫ ওয়ার্ড ১৬
• ঘিঞ্জি এলাকা, রাস্তা অপরিসর
• পানীয় জলের সঙ্কট
• নিয়মিত বর্জ্য সাফাই হয় না।
• পানীয় জল পর্যাপ্ত নয়
• বি বিপিএল তালিকায় প্রকৃত
দুঃস্থদের অনেকেই নেই
• মশার উপদ্রব

প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। কিছু কাজ
বাকি, তা-ও দ্রুত হয়ে যাবে।
গগনচন্দ্র ঘোষ,

পরিচ্ছন্ন পানীয় জল মিলছে।
রাস্তায়বসেছে আলো।
উমা ঘোষ,

অন্তত তিনটি পাড়ায়
ছিটোফোঁটাও কাজ হয়নি।
সোনা চট্টোপাধ্যায়,

জলের ধারা সরু। আলো
বসেছে ভুল জায়গায়।
অসীমা চট্টোপাধ্যায়,

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.