গরম পড়তেই যথারীতি জলসঙ্কট শুরু হয়েছে সালানপুর ব্লকের নানা গ্রামে। এলাকার পুকুর শুকিয়ে কাঠ। গভীর নলকূপেও জল নেই। এমন অবস্থায় গ্রামগুলিতে ট্যাঙ্কে করে জল সরবারহ করার কথা ব্লক প্রশাসনের। কিন্তু তা-ও মিলছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রশাসনের কর্তারা এ ব্যাপারে শুকনো আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। ব্লক প্রশাসনের দাবি, পর্যাপ্ত টাকা না আসায় জল সরবরাহে অসুবিধা হচ্ছে।
গত বছর গরমের শুরুতেই সালানপুর ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। গরম পড়তেই জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে গ্রামগুলিতে। এ রকম অভিজ্ঞতা ব্লক প্রশাসনের আগেও হয়েছে। তবু সময় মতো সমস্যা মেটানোর কোনও চেষ্টা প্রশাসন করেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এই সঙ্কটের জন্য ব্লক প্রশাসনকে সরাসরি দায়ী করেছে ব্লক যুব তৃণমূল। সালানপুরের বিডিও-কে তাদের তরফে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। |
সালানপুর ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিপাথর, কোরষান, ভাগরান, ভুলুডি, মহিষামুড়া, মাধাইচক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য করিগরি দফতরের পাইপলাইন নেই। আবার ট্যাঙ্কে করেও জল সরবরাহ করা হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা সাধন মণ্ডল বলেন, “মার্চের শেষ দিক থেকেই জলের সমস্যা শুরু হয়েছে। এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখন আমরা কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে পানীয় জল নিয়ে আসছি।” আর এক বাসিন্দা সুরেশ বাউরি বলেন, “প্রতি বছর ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করা হয়। এ বার তা হচ্ছে না। এ রকম চলতে থাকলে নির্জলা হয়ে মারা যাব।”
সালানপুর ধসপ্রবণ এলাকা। তাই এখানে গভীর নলকূপ বা কুয়ো খুঁড়ে পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না। এলাকার বাসিন্দাদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইন ও ট্যাঙ্কের জলের উপরেই ভরসা করে থাকতে হয়। জল সমস্যার জন্য কংগ্রেসের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্লক যুব তৃণমূল। দ্রুত সমস্যা মেটানোর জন্য বিডিও-কে স্মারকলিপিও দিয়েছে তারা। সংগঠনের নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ভাবেই না। তাই এত সমস্যা।”
গ্রামগুলিতে যে ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ হচ্ছে না, তা স্বীকার করেছেন সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের শ্যামল মজুমদার। শ্যামলবাবু বলেন, “গ্রামগুলিতে ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করার জন্য যে টাকা দরকার, তা জেলা প্রশাসন থেকে আসেনি। তবে আমরা নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করব।” সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস বলেন, “টাকার অভাব কিছুটা আছে। তবে জেলা থেকে যে টাকা এসেছে তা দিয়ে ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় দেড়শোটি গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শীঘ্র সে কাজ হয়ে যাবে।” ব্লকের এক আধিকারিক আবার জানান, গত বছর গরমে জল সরবরাহে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থাগুলি এখনও বকেয়া টাকা পায়নি। পুরনো বকেয়া না মেটালে তাঁরা কেউ জল সরবরাহ করতে রাজি হচ্ছেন না। এই অবস্থায় আরও বেশি সমস্যায় পড়েছে ব্লক প্রশাসন। বিল বকেয়া থাকার কথা স্বীকারও করেছেন বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “তিন সপ্তাহ আগেই ওই ব্লক আড়াই লক্ষ টাকা পেয়েছে। জলের সমস্যা মেটানোর সব রকম ভাবে উদ্যোগী হতে বলেছি।” জেলাশাসক আরও জানান, দুর্গাপুর ও আসানসোলের পঞ্চায়েতগুলিতে প্রায় তিনশো নলকূপ বসানো হবে। আগামী জুনের মধ্যেই সেগুলি থেকে জল মিলবে। |