দক্ষিণ কলকাতা
তৃষ্ণা মেটার আশা
উদ্যান ‘জলে’
টালিগঞ্জ-বাঁশদ্রোণী এলাকার দীর্ঘ দিনের জলসঙ্কট মেটাতে উদ্যোগী হল পুরসভা। কিন্তু জায়গার অভাবে একটি শিশুউদ্যানে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রফুল্ল পার্ক নামের ওই উদ্যানে সমীক্ষাও করা হয়েছে, বরাদ্দ হয়েছে দু’কোটি টাকা। পুরসভা সূত্রে খবর, পরিকল্পনাটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (জল) শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, ওয়ার্ডের শিশুউদ্যানে পাম্পিং স্টেশন করার পরিকল্পনা করা হল কেন?
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতা পুরসভার ১১১, ১১২, ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জলসমস্যা বেশ প্রকট। সম্প্রসারিত মেট্রো চালু হওয়ার পরে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা বেড়েই চলেছে। পুরসভা সূত্রে খবর, এখন বিধানপল্লি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে পুরসভার ওই চার ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করা হয়। এখন মাত্র দুই মিলিয়ন গ্যালন জল বরাদ্দ চারটি ওয়ার্ডের জন্য। তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে গার্ডেনরিচের জলের সঙ্গে পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জল মিশিয়ে দিনের দু’টি সময়ে ওয়ার্ডগুলিতে সরবরাহ করা হয়। তাতেও সঙ্কট মেটে না।
এখানেই পাম্পিং স্টেশন তৈরি হওয়ার কথা। ছবি: পিন্টু মণ্ডল
পুরসভার বক্তব্য, এই সঙ্কট মেটাতেই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা। কিন্তু যে এলাকায় সমস্যা বেশি সেই ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য ফাঁকা জায়গা না পেয়ে এই শিশুউদ্যানেই পাম্পিং স্টেশন তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। তা ছাড়া, বাজেটে যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তাতে ওয়ার্ডের অন্য জায়গায় করলে নতুন করে পাইপলাইন বসাতে হত। তার খরচ বরাদ্দ হওয়া টাকায় কুলোত না।
এখন ওয়ার্ডগুলির ভিতরে পানীয় জলের জন্য নলকূপই ভরসা। সেখানে গার্ডেনরিচের পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন পুর-কতৃর্পক্ষ। তবে পুরসভা সূত্রে খবর, প্রফুল্ল পার্কে যে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হবে, তা থেকে মূলত ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডেই জল সরবরাহ হবে। এই পাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে বিধানপল্লির জল ১১১ এবং ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে।
কিন্তু সত্যিই কি ওই উদ্যান নষ্ট না করে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করা যেত না?
১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা করমজুমদার বলেন, “এলাকায় জলসঙ্কটের সমস্যাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পুরসভার আর কোনও বড় জায়গা নেই। তা ছাড়া পার্কটির পাশ দিয়েই গার্ডেনরিচের পাইপলাইন গিয়েছে। এখানে পাম্পিং স্টেশন হলে পাইপলাইন বসানোর খরচও অনেক কম হবে।” কাউন্সিলর আরও বলেন, “ওই পার্কটির পাশেই বস্তি রয়েছে। বস্তির কিছু মানুষের জন্য আশপাশের বাসিন্দা বা ছোট ছেলেমেয়েরা উদ্যানে যেতে পারে না। ওখানে পাম্পিং স্টেশন হলে সব সময় নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। দরকারে জলাধারের উপর উদ্যান তৈরি করে দেব। এ রকম পার্ক কলকাতার অন্য জায়গাতেও আছে।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সবে জায়গাটা সমীক্ষা করেছি। আশা করছি এখানেই হবে। তবে অন্য কোনও জায়গা পেলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে।” অবশ্য, বিশেষ সূত্রে খবর, ওই শিশু উদ্যানেই পাম্পিং স্টেশন হবে। অন্য দিকে মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনও খবর নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে জলসমস্যা যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই অন্য জায়গা না পেলে পার্কেই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জলাধারের উপর পার্ক করে দেওয়া যেতে পারে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.