|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পানিহাটি পুরসভা
|
জঞ্জালে জেরবার |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি মেনে ভাগাড়ে ময়লা ফেলা বন্ধ। ফলে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছেন অন্য অংশের বাসিন্দারা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ধারে, ফাঁকা বা নিচু জমিতেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে এলাকার আবর্জনা এলাকায়ই পড়ে থাকছে। পুরসভা সূত্রে খবর, বিকল্প একটি জায়গা পাওয়াও গিয়েছে। ভাগাড় নির্মাণ নিয়ে ভাবনা চলছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯৭২-এ ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুরে একটি জমি কিনে ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার শুরু করে পুরসভা। তখন ভাগাড়ের আশেপাশে জনবসতি কম ছিল। পাশে শুধু পুরসভার ৮৫টি শ্রমিক আবাসন ছিল। কিন্তু পরে ভাগাড়-সংলগ্ন অরুণাচল, ম্যান্ডেলা পার্ক, এলআইসি আবাসন, দক্ষিণায়ন এলাকায় প্রচুর জনবসতি গড়ে ওঠে। ভাগাড় থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। শুরু হয় বিক্ষোভও।
দূষণ এড়াতে পুর-উদ্যোগে বছর পাঁচেক আগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে কেএমডিএ ওই ভাগাড়ে একটি জৈব সারের প্ল্যান্ট তৈরি করে। কিন্তু অভিযোগ, এতেও দূষণ এড়ানো যায়নি। পচা আবর্জনা, পশুর গলিত দেহ, সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার দুর্বিষহ গন্ধে আশপাশের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠত বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরে ভাগাড়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লা আর পশুপাখির পচা দেহ ফেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুরসভা। |
|
স্থানীয় বাসিন্দারা ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ থেকে রামচন্দ্রপুর ভাগাড়টি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। বিক্ষোভের আশঙ্কায় পুর-কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মেনেও নিয়েছেন। ভাগাড়ের কাছের বাসিন্দা সোহন রুইদাস বলেন, “ভাগাড়ের দূষণে প্রাণান্তকর অবস্থা হত। বহু বিক্ষোভ হয়েছে। এখন বন্ধ আছে।” পুরসভা সূত্রে খবর, প্রকল্প নির্মাণের পরে বাসিন্দাদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আবর্জনার পরিমাণও অনেক বেড়েছে। পুরো আবর্জনার প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হচ্ছে না। সেই আবর্জনা জমে দূষণ ছড়াচ্ছিল।
অভিযোগ, ভাগাড় বন্ধের পরে পুরসভার আবর্জনা অপসারণ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। সমস্যায় পড়েছেন পুরসভার অন্য অংশের বাসিন্দারা। নাইট-সয়েল ভাগাড়ের বদলে নর্দমা ও নিচু জমিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এক বাসিন্দা অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, “ভাগাড়ের আশেপাশের বাসিন্দাদের অসুবিধা বুঝতে পারছি। কিন্তু এ ভাবে ময়লা পড়ে থাকলে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না।” |
|
পানিহাটি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের মলয় রায় বলেন, “১৯৭২-এ ওই জমি পুরসভা অধিগ্রহণ করে। প্রযুক্তিগত ত্রুটিতে ভার্মি কম্পোজ প্রকল্পটি ঠিকমতো চালু করা যায়নি। ফলে এলাকার মানুষকে দূষণে জেরবার হতে হয়েছে। নাগরিকদের দেওয়া সময়সীমা মেনে এখন ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ। মহিষপোতায় পুরসভারই একটি জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে ভাগাড় চালু করতে না-পারায় খুব সমস্যা হচ্ছে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “পুরসভা ওখানে জৈব সার প্রকল্পটি চালায়। সার বিক্রিও হয়। তবে প্রতি দিন ১৫০ মেট্রিক টনেরও বেশি আবর্জনা এখানে আসত। সবটা প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব নয়। জমে থাকা আবর্জনা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছিল। তাই বিক্ষোভ হয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও সন্তুষ্ট ছিল না। আমরা মহিষপোতায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে ভাবছি। তত দিন এই ভ্যাটটি আবার ব্যবহারের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করছি।” |
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|