|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
অপেক্ষা স্থায়ী সমাধানের
|
জতুগৃহে বিকিকিনি |
কৌশিক ঘোষ |
হাতিবাগান বাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। মেছুয়াবাজারের আকাশে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখেও হেলদোল নেই কারও। রাস্তার পাশে খড়ের স্তূপ। ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্যাকিং বাক্স, পিচবোর্ড, কাগজ। কাছেই সার দিয়ে হোটেল। আগুন জ্বালিয়ে রান্না চলছে। অভিযোগ, আগুন লাগলে দমকল ঢোকার জায়গা নেই। নেই জলের জোগানও। এমনই অবস্থা উত্তর কলকাতার মেছুয়াবাজারের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফলের বাজারটি কার্যত জতুগৃহ। বৈদ্যুতিক সংযোগও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
উত্তর কলকাতার মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিট, বাল মুকুন্দ মক্কর রোড, রামলোচন মল্লিক স্ট্রিট এবং বল্লভ দাস স্ট্রিট অঞ্চলের প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে এই ফলের বাজার। পাইকারি বিক্রি হয়। কাছেই রয়েছে পুরনো বাড়ি, স্কুল, ধর্মশালা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অভিযোগ, এই বাজারের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। চারপাশে পুরনো তার ঝুলে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আগেও কয়েক বার আগুন লেগেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় তা বড় আকার নিতে পারেনি। |
 |
কয়েক বছর আগেই ঘন জনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চল থেকে এই বাজার সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শহরের বাইরে হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে এই বাজার স্থানান্তরিত করা হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, নতুন সরকার এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছোট রাস্তায় লরি চলাচলে খুবই অসুবিধা হয়। রাস্তা আটকেই মাল নামাতে হয়। ফলে বিপদের সময় দমকল ঢুকতে সমস্যা হবে। ফ্রুট মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ইফতাকার আলম বলেন, “বাজারটি জতুগৃহ হয়ে উঠেছে। বাজার না সরালে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। ট্রাক ঢোকা বন্ধ করলে ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক ব্যবসায়ীর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও নেই। দমকল-সহ প্রশাসনের সব স্তরেই আমি এই সমস্যার ব্যাপারে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।”
রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মেছুয়া ফলের বাজার শহর থেকে সরানো ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। আগের পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়িত হয়নি তা আমার জানা নেই। তবে, এই ব্যাপারে আলোচনা করব।” |
 |
স্থানীয় কাউন্সিলর রীতা চৌধুরি বলেন, “মূল সমস্যাই হচ্ছে রাস্তা সর্বক্ষণ আটকে থাকা। আগুন লাগলে দমকল ঢোকার জায়গা নেই।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানকার ব্যবসায়ীরা অগ্নিসুরক্ষার বিধি মানছেন কি না তা দেখার পরিকাঠামো পুরসভার নেই। দমকলের সাহায্য চেয়েছি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলবৎ করতে দমকলের সঙ্গে যৌথ ভাবে শহর জুড়েই অভিযান চালানো হবে। কিছু কিছু জায়গায় এর মধ্যেই অভিযান হয়েছে।” দমকল সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে এই বাজার ‘দহন-প্রবণ’। কিন্তু দমকল ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “দ্রুত এই অঞ্চল থেকে বাজার সরিয়ে নিতে না পারলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। সবার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কি না তা পরিদর্শনে জোর দিয়েছি। না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত এই অঞ্চলের আগুন দ্রুত মোকাবিলার জন্য পোস্তায় একটি দমকল কেন্দ্র করা হচ্ছে। লালদিঘি থেকে মূল লাইনের মাধ্যমে হাইড্রান্টে জল সরবরাহ হবে। তবে ওখানে দমকলের গাড়ি ঢোকারও সমস্যা রয়েছে। ট্রাফিককে বিষয়টি জানিয়েছি।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই অঞ্চলে বেআইনি ভাবে পার্ক করা গাড়ি ধরা হচ্ছে। রাত দশটা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্তই এখানে লরি ঢুকতে পারবে। পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। মাঝেমধ্যে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছি। উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এলাকায় সমীক্ষা করে একটি ফাঁকা করিডরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” |
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
 |
|
|