যাত্রী হয়রানি
দুর্গম স্টেশন
যেন ডিম আগে না মুরগি আগে!
যাত্রী হয় না বলে পরিবহণ অপ্রতুল নাকি পরিবহণ বেহাল বলে যাত্রী কম? এই অবস্থা দক্ষিণ পূর্ব রেলের শালিমার স্টেশনের।
রেল সূত্রে খবর, হাওড়া স্টেশনের চাপ সামাল দেওয়ার জন্যই দক্ষিণ পূর্ব রেল শালিমারকে পূর্ণাঙ্গ টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। শালিমারে এখন ২৪ বগির ট্রেন দাঁড়ানোর দু’টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। আরও প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা ছিল, কিন্তু যাত্রীর অভাবে তা আপাতত স্থগিত রয়েছে।
শালিমার থেকে এখন ১২টি এক্সপ্রেস ও ৪ জোড়া লোকাল ট্রেন ছাড়ে। ‘আরণ্যক এক্সপ্রেস’ এবং ‘লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস’ দৈনিক চলাচল করে। কিন্তু অভিযোগ, ট্রেন ধরার জন্য শালিমার পৌঁছাতে যাত্রীদের চরম নাকাল হতে হয়। ডাউন ট্রেনের যাত্রীরা সাঁতরাগাছিতেই নেমে পড়েন। কারণ, পরিবহণের অভাব। লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেসের যাত্রী সঞ্জীব ভুঁইয়া বলেন, “শালিমার স্টেশনে পৌঁছানো প্রায় দুঃসাধ্য। কোনও বাস নেই। ট্যাক্সি মিটারে যেতে চায় না। উল্টোপাল্টা ভাড়া চায়।”
শালিমার-পটনা দুরন্ত এক্সপ্রেস, তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস এবং নাগোরকয়েল এক্সপ্রেস যথাক্রমে রাত ১০টা, পৌনে এগারোটা এবং ১১টায় শালিমার থেকে ছাড়ে। অভিযোগ, অত রাতে শালিমার স্টেশনে আসা কার্যত অসম্ভব। তাই অনেক যাত্রীই সন্ধ্যায় চলে আসেন। যাত্রীদের অভিযোগ, রাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটোসাটো নয়।
শালিমার স্টেশনের পাশেই রেলের তরফে বাস ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। আগে এখান থেকে রাজাবাজার এবং শিয়ালদহগামী দু’টি রুটের বাস চলত। অভিযোগ, এখন তারা অন্যত্র থেকে ছাড়ে। বাস ধরতে হলে প্রায় আধ কিলোমিটার হেঁটে কলেজ রোডে আসতে হয়। ফলে, ট্যাক্সিই ভরসা। কিন্তু তার দেখা পাওয়া ভার। অভিযোগ, অনেক সময় ট্যাক্সি মিটারে আসতে চায় না। ইচ্ছে মতো ভাড়া চায়। এক ট্যাক্সি চালক বলেন, “শালিমারে যাত্রী হয় না বলে ট্যাক্সি থাকে না। বেশি রাতে বা ভোরে গেলে ভাড়া তো একটু বেশি লাগবেই।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর, শালিমারে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলেজ রোড থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করা হয়েছে। পরিবহণ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রেলের একাধিক বৈঠক হয়েছে। হাওড়ার জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “শালিমার স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। বাসরুট পরিবর্তনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “পরিবহণ ব্যবস্থা ভাল নয় বলে যাত্রী কম হয়। আবার যাত্রী কম বলে বাস, ট্যাক্সি থাকে না। দূরপাল্লার ডাউন ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীই সাঁতরাগাছিতে নেমে যান। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, আবারও করব। তবে নিরাপত্তার অভাব নেই।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “যাত্রী বাড়লে ওখানে ট্যাক্সি বুথ করে দেওয়া হবে। স্টেশনের কাছে বেসু থেকে বাস চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.