|
|
|
|
|
|
প্রতি পক্ষ |
চেনা যায় বিজ্ঞাপনে |
একদিন নিজেই একটি বিজ্ঞাপন ছবি বানালেন। কলকাতা জুড়ে ফুটবল খেলছে সবুজ বাচ্চারা।
বাকিটা রূপকথা। সুজিত সরকারের মুখোমুখি শোভন তরফদার |
তিনি ভারতের এক সুখ্যাত বিজ্ঞাপন চিত্রনির্মাতা। এ রকম একটা
বাক্য দিয়ে যদি সাক্ষাৎকারটা শুরু করি!
হো হো করে হেসে উঠলেন সুজিত সরকার, বললেন, “কেন, শুধু চিত্র-নির্মাতা বললেই বা ক্ষতি কী? ফিল্ম মেকারও তো বটে! শুধুই অ্যাড ফিল্ম মেকার?”
না, তা নয়। আপনার ‘ইয়াহাঁ’ দেখেছি আমরা, তার পরে এই ‘ভিকি ডোনার’। কিন্তু, সুজিত সরকার বললেই বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে। তাই, আজ যদি বিজ্ঞাপনের ছবি নিয়েই দু-একটা কথা হয়, তা হলে?
“ভাল, খুব ভাল। অ্যাড-ফিল্মই বলুন বা ফিচার, দুটোরই মূলে কোনও না কোনও একটা ভাবনা থাকে। কনসেপ্ট। গল্পও থাকে দুটোতেই। বিজ্ঞাপন করেন যিনি, তিনি যখন ফিচার বানাতে আসেন, তখন তাঁকে একটা অদ্ভুত জাগলিং করতে হয়।”
এটাই বলছিলাম। একটা ছবি তিরিশ সেকেন্ড, বড়জোর এক মিনিট। আর একটা, ধরুন, দু’ঘণ্টা। মনটাকে দু’ভাবে তৈরি করতে হয় না?
“হয়ই তো! এটা শুনতে সহজ লাগে, কিন্তু আসলে খুবই শক্ত। এক মিনিটেও গল্প, দু’ঘণ্টাতেও তাই। আজকাল অ্যাড অনেক বদলে গিয়েছে। অ্যাড-এর ডিটেলিংগুলো...”
এক মিনিট। এই যে বললেন, অ্যাডটা বদলে গিয়েছে, সেটা কী রকম?
“সেটা এই অর্থে যে, আগের মতো ‘হার্ডসেল’টা আর নেই। বা, নেই বলা হয়তো একটু বাড়াবাড়ি, থাকলেও অনেক কমে গিয়েছে। একটা প্রডাক্ট আপনি বেচবেন। ব্যস, স্রেফ সেটার ছবি দেখিয়ে দিলেন, সঙ্গে দুটো কথা বা একটা জিঙ্গল, গোটা জিনিসটা সেটুকুতেই থেমে থাকছে না। এখন হতেই পারে, অ্যাড-এ আপনি দিব্যি একটা গল্প দেখলেন। অনেক সময় তার সঙ্গে প্রডাক্টটার সরাসরি কোনও যোগাযোগও নেই, তা-ও হতে পারে। তবে, ওই যে বলছিলাম, ডিটেলিং...”
‘ডিটেলিং’ বলতে?
“ছোট ছোট ইমোশন, মোচড়। সেখান থেকেই জিনিসটাকে বের করে আনা। ফিল্মে জায়গাটা বেশ বড় হয়ে যায়। সেটা একটা বিরাট সুবিধা। আর একটা সুবিধা হচ্ছে, অ্যাড-এ আপনি গল্প বললেও তার একটা বাঁধন আছে। যা-ই করুন, শেষটায় আপনাকে একটা কিছু বেচতে হবে। পণ্য হোক, পরিষেবা হোক, বেচতে হবে। ফিল্মে সেটা নেই।”
|
|
ধরুন, আপনাকে যদি এখনই বলা হয়, বিজ্ঞাপন না সিনেমা, যে কোনও একটাকে বাছতে হবে, কোনটাকে বাছবেন?
“খুব দুঃখ হবে, কারণ বিজ্ঞাপন দিয়েই আমার শুরু, কিন্তু শেষে সিনেমার দিকেই যাব। ওই একটা লোভেই যাব যে এখানে অন্তত কোনও মাল বেচতে হবে না। সব সময় নিজস্ব ন্যায়বোধ, নীতিবোধের সঙ্গে আপস করতে হবে না। ইউ আর হোয়াট ইউ আর...তা ছাড়া, আর একটা কারণও আছে। সিনেমা বানানোর সময় আপনি জানেন যে লোকে আপনার সিনেমা দেখতে আসছে। তাতে দায়িত্বটা অনেক বেড়ে যায়। বিজ্ঞাপন ছবিতে তো নিরানব্বই শতাংশ লোকই জানে না যে এটা কে বানিয়েছে। ছবিতে তা নয়। তবে, এটা ঠিকই যে, বিজ্ঞাপন তৈরি করলে পুরো প্রক্রিয়াটাকে ভাল করে দেখা যায়, শেখা যায়। সেটা খুব জরুরি। অন্য রকম একটা দেখার চোখও তৈরি হয়। রিডলে স্কট, সত্যজিৎ রায় থেকে প্রদীপ সরকার, ঋতুপর্ণ ঘোষ অনেক নামী পরিচালকই বিজ্ঞাপন দুনিয়ার লোক।”
সমস্যা হয় না? তিরিশ সেকেন্ড-এর মনটা নিয়ে দু’ঘণ্টার গল্প বানাতে বসলে?
“যথেষ্ট হয়। তবে, আমার যে হেতু নাটকে কাজ করার, অভিনয় নয় অবশ্য, ব্যাকস্টেজ একটা অভিজ্ঞতা ছিল, তাই অতটা সমস্যা হয়নি। তবে, একেবারেই হয়নি, বললে ভুল হবে।”
কী রকম হয়েছিল? একটা উদাহরণ?
“ধরুন, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ইমোশনটাকে ট্রিম করতে করতে তিরিশ সেকেন্ড বা এক মিনিটের ফরম্যাটে নিয়ে আসা একটা বিরাট কাজ। এটা করতে করতে এক ধরনের ট্রেনিং হয়ে যায়। পরে, ফিল্ম করতে এলে অনেক সময় একটু তাড়াহুড়ো করে কোনও একটা মোমেন্টকে কেটে ফেলার একটা সম্ভাবনা থাকে। ধরুন, একটা কোনও ‘সিন’ তৈরি হচ্ছে, জায়গাটা আরও একটু রাখা উচিত, অ্যাড ফিল্ম মেকার অনেক সময় থামিয়ে দেন। মনে হয়, ঢের হল, আর কেন? আমারই প্রথম ফিল্মে এটা হয়েছিল। আমি ‘কাট’ বলতাম, আর ক্যামেরাম্যান বলত, আরে, লেট দেম পারফর্ম। হোয়াই আর ইউ কাটিং? পরে, একই জিনিস মিস্টার বচ্চনের সঙ্গেই হয়েছে। উনি আমার সঙ্গে একটা ছবিতে কাজ করেছেন। ছবিটা মুক্তি পায়নি অবশ্য, কবে পাবে, তা-ও জানি না। মিস্টার বচ্চন শট দিচ্ছেন, আমি ‘কাট’ বলেছি, উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আরে, সুজিত আমি তো একটা কিছু করছিলাম, আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, সরি স্যার! আপনি করুন। উনি বললেন, না চলো, হয়ে গেছে, পরের শটটা বলো। গোড়ায় হত বটে, কিন্তু পরে এটা কাটিয়ে উঠেছি। আসলে, শটটা চলার সময়েই আমি ঠিক করে নিই, কোথায় কাটব।”
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আপনি গুজরাতে শুট করছিলেন...
“হ্যাঁ, একটা ক্যাম্পেন ছিল।”
সেখানে উনি নাকি একটা কয়েকশো ফুট গভীর কুয়োয় নেমে গিয়েছিলেন!
“একদম! আমি তো স্তম্ভিত! উনি কুয়োটা দেখে বললেন, আমি ভিতরে নামব। একেবারে খাড়াই কুয়ো নয়, কিন্তু অনেকটা গভীর! নীচটা দেখাই যায় না। আশ্চর্য, উনি নামলেন। আমরাও নামলাম। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা!”
সুজিত সরকারের জীবনটাই বিচিত্র। দিল্লির বাসিন্দা, অর্থাৎ, এন আর বি, অনাবাসী বাঙালি। কাজ করতেন নাটকে। সেখান থেকে দূরদর্শন। ঘটনাচক্রে প্রদীপ সরকারের সঙ্গে আলাপ। তাঁর সহকারী হয়ে কাজ শুরু। তার পরে, একদিন নিজেই একটি বিজ্ঞাপন ছবি বানালেন। কলকাতা জুড়ে ফুটবল খেলছে সবুজ বাচ্চারা। বাকিটা রূপকথা।
ত্রিশ সেকেন্ডে সেই গল্পটা বলা যায়। আবার, ঠিক বলাও যায় না।
যদি সেই গল্পটা বলতে হয়, কোন ফরম্যাটটা বাছবেন? এক মিনিট না দু’ঘণ্টা?
সুজিত সরকার আবার হো হো করে হাসলেন। |
|
|
|
|
|