বর্ধমান, জলপাইগুড়িই শুধু নয়, এ বার দুই ২৪ পরগনাকেও ছোট জেলায় ভাঙার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় এসেই তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ভাগ করা হবে বড় জেলাগুলিকে। সে কাজ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট গতি পেয়েছে। বর্ধমান ও জলপাইগুড়ি ভাগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্যই এ কাজ করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিধাননগরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছোট জেলা হলে উন্নয়নে গতি আসে। পরিষেবাও উন্নত হয়। সর্বোপরি জেলার সংখ্যা বাড়লে কেন্দ্র থেকে আরও বেশি টাকা পাওয়া যায়।” সিপিএম -কে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “আগের সরকার এ সব করে গেল না কেন? তা হলে আর আমাকে করতে হত না ! ” মুখ্যমন্ত্রীর এই কটাক্ষের অবশ্য কোনও জবাব দেননি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, “জেলা ভাগ নিয়ে ওঁরা ঠিক কী করতে চান, তা না জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়। যদি এ নিয়ে ওঁরা কোনও বৈঠক ডাকেন, কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন, তা হলে মতামত জানাতে পারব।”
এ দিনই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন সংক্রান্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত -সম্বলিত রিপোর্ট জমা পড়েছে মহাকরণে। ওই রিপোর্ট তৈরির আগে জেলা পর্যায়ে দু’টি সর্বদল বৈঠক হয়েছে। বর্তমানে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় যে আটটি ব্লক রয়েছে, সেখানকার বিডিও ও ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার আধিকারিকদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের বক্তব্য, “জেলা পর্যায়ে দু’টি সর্বদল বৈঠকেই নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন সকলে।”
বিধাননগরের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমান, জলপাইগুড়ি ও দুই ২৪ পরগনা ভাঙার কথা বলেন। রাজ্য প্রশাসন অবশ্য আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আসানসোল ও
দুর্গাপুর নিয়ে পৃথক জেলা হবে। জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার কেটে তৈরি হবে নতুন জেলা। এই নিয়ে মহাকরণে এক দফা সর্বদল বৈঠকও হয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এত বড় জেলা যে, আমার মনে হয় তিন ভাগ করা উচিত ! কোথায় সন্দেশখালি, কোথায় মিনাখা। কোথায় বনগাঁ, বারাসত, বিধাননগর। এক জন পুলিশ সুপারের পক্ষে কি এত বড় এলাকা সামলানো সম্ভব?” ইতিমধ্যেই কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার কিছু এলাকা নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেট গঠিত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরতলির থানাগুলিও চলে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের অধীনে। মহাকরণ সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারকে পৃথক জেলা করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।
২০০২ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর ভাগ হয়। এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে যে চারটি মহকুমা রয়েছে তার অন্যতম ঝাড়গ্রাম। বস্তুত, বাম আমলেই ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু তখন সরকার ঝাড়গ্রামকে কেবল পুলিশ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করে।
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, জেলা ছোট হলে যেমন উন্নয়নে গতি আসে ও আইন -শৃঙ্খলা রক্ষা সহজ হয়, তেমনই অফিসারদেরও কাজে লাগানোর সুযোগ বাড়ে। এক অফিসারের কথায়, “পুলিশে ওসি থেকে এসপি এবং সাধারণ প্রশাসনে বিডিও থেকে জেলাশাসক অনেক বেশি অফিসারের উন্নয়ন করতে পারে সরকার। এতে প্রশাসনেরও কাজে গতি আসে।” এ দিন বিধাননগরের অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “কাকদ্বীপ, খড়্গপুর ও এগরায় নতুন এসডিও অফিস হচ্ছে। আরও কয়েকটি মহকুমায় কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।” |
