পুকুরে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে একটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর দক্ষিণ মোকামবেড়িয়া। মারামারিতে জখম দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ দায়ের করেছে বাসন্তী থানায়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দু’পক্ষের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ওই গোলমালে জড়িয়ে যায় আরএসপি এবং তৃণমূলের রাজনীতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ মোকামবেড়িয়ার বাসিন্দা চরণ মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর ভাই বরেন, জয়দেব, সুবল, নিরঞ্জন এবং হরেন মণ্ডলের জমি-সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে। তাঁরা সকলে পাশাপাশি থাকেন। চরণবাবুর ছেলে ক্ষুদিরাম একটি পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করেন। অভিযোগ, এ দিন বরেন, জয়দেবরা জোর করে ওই পুকুরে মাছ চাষ করতে যায়। সেই নিয়েই শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। দু’পক্ষেরই আরও লোকজন সেখানে চলে আসে। বচসা ক্রমে মারামারিতে পরিণত হয়। দু’পক্ষই দা, কুড়ুল, কাটারি, রড, শাবল বের করে। মারামারির মধ্যেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ক্ষুদিরামের বাড়িতে। ভস্মীভূত হয়ে যায় তিনটি বাড়ি। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়। খবর পেয়ে বাসন্তী থানার ওসি সুবীর ঢালি বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। জখম অবস্থায় ক্ষুদিরামের ভাই প্রভাস এবং বরেনবাবুকে কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |
ক্ষুদিরাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আরএসপি করি। কাকারা তৃণমূলের সমর্থক। জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ রয়েছে। সেই নিয়ে গ্রামে বিচারও হয়। সেই মতো নিজেদেরই পুকুরে মাছ চাষ করি। কাকারা জবরদস্তি পুকুরের দখল নিতে যায়। বাধা দিলে আমাকে, বাবা এবং ভাইকে প্রচণ্ড মারধর করে।” বরেনবাবুর ছেলে উদয়ের পাল্টা অভিযোগ, “আমরা তৃণমূল করি বলে ওরাই পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করে। আমাদের জমির কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ওরাই তা দখল করে রেখেছে। ওরা বাবাকে মারছিল। ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারে।”
আরএসপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য চন্দ্রশেখর দেবনাথ বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে, ভয় দেখিয়ে তৃণমূল এলাকা দখল করতে চাইছে। সেই কারণেই পরিকল্পিত ভাবে ক্ষুদিরামের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। ওঁকে উচ্ছেদ করতে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “বরেনবাবু ওই এলাকায় আমাদের দলের বুথ সভাপতি। ওরা বরেনবাবুকে বেধড়ক মারধর করে। উনি মারা গিয়েছেন মনে করে ওরা চলে যায়। তার পরে নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে আমাদের দলের নামে মিথ্যা রটাচ্ছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আপাতত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |