বিএ প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে কটূক্তি এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি অশোকনগরের নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের। অভিযোগ পেয়ে বুধবার রাতেই আটক করা হয়েছিল সোমনাথ দে নামে ওই ছাত্রকে। বৃহস্পতিবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী ওই ছাত্রী এবং অভিযুক্ত সোমনাথ দে দু’জনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী। সোমনাথ বিএ দ্বিতীয় বর্ষের সিআর। ছাত্রীটির কথায়, “বুধবার শারীরশিক্ষা পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগে সোমনাথ এবং ওর বন্ধুরা ক্লাসে এসে আমায় কটূক্তি করে। পরে হাত ধরে টানে। ভয়ে আমি ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারিনি। ঘটনার পর অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বললে ও রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাই।” খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ছাত্রটিকে থানায় নিয়ে যায়। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, থানায় নিয়ে গিয়ে ছাত্রটিকে জেরা করা হয়। ইতিমধ্যে অধ্যক্ষ সুধানাথ চট্টোপাধ্যায় ওই ছাত্রীর অভিযোগপত্রটি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বুধবারের এই গোটা ঘটনায় ফের টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে এল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আছেন অশোকনগর শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি পাপন সরকার এবং ছাত্রনেতা প্রদীপ সিংহ। এই ঘটনায় বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে দায়ী করে পাপন বলেন, “ওই ছাত্র কটূক্তি বা শ্লীলতাহানি, কোনও ঘটনার সঙ্গেই যুক্ত ছিল না। আমাদের সঙ্গে থাকে বলে ওকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”
অন্য দিকে, সোমনাথকে সংগঠনের কর্মী হিসেবেই মানতে নারাজ প্রদীপবাবু। ‘সে টিএমসিপির সিআর নয়’ দাবি করে প্রদীপবাবু বলেন, “সোমনাথ আমাদের সংগঠনের কর্মী প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেছে। এমনকী ওই ছাত্রীর হাত ধরে টেনে ক্লাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে সে। অন্য ছাত্রেরা তাকে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর পিছনে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।”
সম্প্রতি সরস্বতী পুজোর কমিটি গঠন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। নির্বাচনে দু’টি গোষ্ঠীর সদস্যেরা আলাদা ভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। বিভিন্ন কারণে দু’পক্ষে সংঘর্ষও হয়েছিল। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দু’পক্ষের সমস্যা মেটানোর জন্য বৈঠকও করে স্থানীয় নেতৃত্বকে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।
জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “এক ছাত্রী অভিযোগ করেছে। পুলিশ সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। দল এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।” এ দিকে পাপনের অভিযোগ, ছাত্রীটি অভিযোগ তুলে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু অন্য গোষ্ঠীর সদস্যেরা তাঁকে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায় নিয়ে যান। পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্ত ছাত্রীটিকে ভুল বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সমীরবাবু বলেন, “ছাত্রীটি আমার কাছে আসতে তাঁকে জিগ্যেস করি, সে কি চায়। সে জানায়, তাঁর সঙ্গে ছাত্রটি খুবই খারাপ ব্যবহার করেছে। এরপরে তাঁকে অশোকনগর স্টেশনে পৌছে দেওয়া হয়।” ঘটনাটি দুঃখজনক বলে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, “শুনেছি ছাত্রীটি মামলা তুলে নিতে চেয়েছিল। কোনও কারণে তা হয়নি।” বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ছাত্রী বলেন, “ঘটনার পর ছাত্রটি আমার কাছে এখনও দুঃখপ্রকাশ করেনি, অনুতপ্তও নয়। ফলে ক্ষমা করার প্রশ্নই ওঠে না।” |