পাশের ঘর থেকে রাতে হঠাৎ তীব্র কটূ গন্ধ পেয়ে তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছিলেন স্বপন বিশ্বাস। স্ত্রীকে ডেকে পাশের ঘরে বাবা-মায়ের ঘরের ভেজানো দরজা ঠেলে দেখেন, গন্ধটা সেখান তেকেই আসছে। বারবার ডেকেও সাড়া না মেলায় অচৈতন্য বাবা-মাকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। তবে বুধবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, স্বপনবাবুর মা নীলিমাদেবী (৬৮) ততক্ষণে মারা গিয়েছেন। বাবা কমলেশবাবুর অবস্থা সঙ্কটজনক। আপাতত তিনি কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
রানাঘাটের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আজহার এ তৌসিফ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ওই বৃদ্ধ দম্পতি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। বৃদ্ধা মারা গিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে।” স্বপনবাবু বলেন, “ওই সুইসাইড নোটে বাবা লিখে গিয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।”
নদিয়ার ধানতলা থানার বহিরগাছি বিশ্বনাথপুর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা কমলেশবাবু এলাকার পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে কিশোর বিশ্বাস ব্যারাকপুরে থাকেন। তিনি রেলের কর্মচারী। ছোট ছেলে স্বপনবাবু থাকেন বাবা-মা’র সঙ্গেই। সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কমলেশবাবু স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা হরপ্রসাদ বাগচি বলেন, “ওই পরিবার এখানে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন। এত সৎ, ভদ্র ও শিক্ষিত মানুষ। আমরা সকলেই শ্রদ্ধা করি। তিনি কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করবেন, তা বুঝতে পারছি না।” হরপ্রসাদবাবু বলেন, “তবে কয়েকদিন আগে কমলেশবাবু বলছিলেন, ‘ব্যাঙ্কে আর মাত্র হাজার পাঁচেক টাকা রয়েছে। এরপর কী হবে বুঝতে পারছি না।’ সে দিন তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা জানি না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলেশবাবু হাজার পাঁচেক টাকার মতোই পেনসন পেতেন। কিন্তু এ ছাড়া পারিবারিক রোজগার তেমন ছিল না। স্বামী স্ত্রী দু’জনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের চিকিৎসা ব্যয় দিনদিন বাড়ছিল। এমনকী, একটি পুকুর ও বসতবাড়ির লাগোয়া খানিকটা জমিও বিক্রি করতে হয়েছিল। বহিরগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুজিতকুমার রায় বলেন, “তাঁরা খুবই অসুস্থ ছিলেন। টাকা-পয়সার টানাটানিও ছিল। কিন্তু তার জন্য তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করবেন, তা ভাবতেই পারছি না।” কমলেশবাবুর সন্তানেরা জানান, কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তবে স্বপনবাবুর কথায়, “বাবা কখনও তাঁর কোনও বিষয়ে উদ্বেগ হলে আমাদের বলতেন না।” |