|
|
|
|
বরাদ্দ অর্থ পড়ে |
জঙ্গলমহলে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জঙ্গলমহলে অসম্পূর্ণ নানা প্রকল্প নিয়ে মহাফাঁপরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। কী ভাবে ওই সব প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হবে, ভেবেই পাচ্ছেন না জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ডের বরাদ্দ অর্থ থেকে শুরু করে জল-প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনার কয়েক কোটি টাকাও খরচ না হয়ে পড়ে আছে। পড়ে থাকা মোট টাকার পরিমাণ ৫০ কোটিরও বেশি! কী করণীয়, তা জানতে এ বার জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের কাছে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হল বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের অর্থ, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতির বৈঠকে। জেলাশাসক যে ভাবে বলবেন, সে ভাবেই কাজ এগোনো হবে। বিভিন্ন খাতে টাকা পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি। সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।”
যে সব প্রকল্পে এ ভাবে অর্ধেক কাজ হয়ে পড়ে রয়েছে, তার অধিকাংশই সেচ-সংক্রান্ত বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ অর্থেই এক সময়ে ওই সব কাজ শুরু হয়েছিল। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক বলেন, “কাজ শুরুর ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল না। কিন্তু, মাওবাদী সক্রিয়তার জেরে অধিকাংশ ঠিকাদার সংস্থা মাঝপথেই কাজ ছেড়ে চলে যায়। জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে আর জঙ্গলমহলে কাজ করা সম্ভব নয়।” এখন আর মাওবাদী সক্রিয়তা ততটা নেই। কিন্তু অর্ধেক পড়ে থাকা কাজ শেষ করা নিয়ে বিস্তর সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব আসছে। কারও বক্তব্য, প্রকল্পগুলির যতটা অসম্পূর্ণ, তার জন্যেই নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হোক। কারও আবার পরামর্শ, আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকেই কাজ সম্পূর্ণ করার অনুরোধ করা হোক। এই পরিস্থিতিতে খানিক বিভ্রান্ত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জেলাশাসকের দ্বারস্থ হওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এমনিতেই পশ্চিম মেদিনীপুরে সেচ-ব্যবস্থা সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে, জলের অভাবে চাষের কাজ মার খায়। ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। জেলায় যেখানে মোট কৃষি-জমির পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, তার মধ্যে সেচ-সেবিত মাত্রই ৩ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৬৩ হেক্টর জমি। জঙ্গলমহলে আবার মোট কৃষি-জমি রয়েছে যেখানে ২ লক্ষ ১২ হাজার ৯৭৮ হেক্টর, সেচ-সেবিত মাত্রই ১ লক্ষ ৯ হাজার ২৯ হেক্টর জমি! বাস্তবে এই অবস্থা আরও করুণ বলেই অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে থমকে থাকা সেচ-প্রকল্পগুলির কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে।
জেলা পরিষদের কোন খাতে ঠিক কত টাকা পড়ে? বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৫৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা পড়েছিল। গত আর্থিক বছরে (২০১১-১২) বিভিন্ন প্রকল্পে আরও ৩০ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্রই ৩২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। পড়ে রয়েছে ৫৬ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা! দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ২ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৭৫ টাকা পড়েছিল। চলতি বছরের মার্চের শেষেও ওই পরিমাণ টাকা পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ, গত আর্থিক বছরে ওই টাকা খরচই করা যায়নি। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেচ-প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকার জন্যেই এই পরিস্থিতি। শুধু পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদেরই নয়, ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ডের ২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৮ টাকা, পশুপালন ও দুগ্ধ-প্রকল্পের ১৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৫৯ টাকা, ইন্দিরা আবাস যোজনার ২২ লক্ষ ৪ হাজার ৪৭০ টাকা, সজলধারা প্রকল্পের ৫৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪২ টাকাও পড়ে রয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকা কাজ শেষ করার জন্য কী করণীয়, প্রাথমিক ভাবে তার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, ওই সব কাজ শেষের জন্য ব্লক-স্তরে ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে। কিন্তু, অন্য একটি মহল থেকে এ ক্ষেত্রে আপত্তি ওঠে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তাই জেলাশাসককে চিঠি লেখারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ মুখোপাধ্যায়ও। বৈঠক শেষে তাঁর অবশ্য অভিযোগ, “শুধু সমস্যার কথা বলে দায় এড়ানো যাবে না। কাজে গতি নেই। তাই উন্নয়ন-খাতের অর্থ পড়ে থাকছে।” |
|
|
|
|
|