সামনের ফেব্রুয়ারিতে পঁচাত্তর পূর্ণ হবে তাঁর। অথচ এখনও রোজ সকালে নিয়ম করে যান অ্যাকাডেমিতে, ছোটদের ক্রিকেট শেখাতে। মাত্র দিন তিনেক আগে উদ্বোধন হওয়া পঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাকাডেমির নতুন শাখার ডিরেক্টর। আইপিএল দেখতে মাঠে এসেছিলেন, কিন্তু বিনোদনের এই ক্রিকেটীয় রূপ মানতে পারেন না। চণ্ডীগড়ে নিজের বাড়িতে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন কপিল দেবের কোচ ‘দ্রোণাচার্য’ দেশপ্রেম আজাদ।
প্র: গত কাল কেকেআর-পঞ্জাব দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন?
আজাদ: অ্যাসোসিয়েশন ডেকেছিল বলে যাওয়া। ওটা ক্রিকেট নয়। দেখলে সময় নষ্ট মনে হয়।
প্র: সময় নষ্ট কেন? ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটটা তো এই প্রজন্মের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। লোকে রোজ সন্ধেবেলা আইপিএল দেখছে...টিআরপি বাড়ছে...
আজাদ: (থামিয়ে দিয়ে) টিআরপি বাড়া যদি কথা বলার বিষয় হয়, আমি নেই। লোকে দেখছে সন্ধেবেলা, তা নিয়েও কিছু বলার নেই। আমি শুধু বলব আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বনাশ করে দিয়েছে। এবং যত দিন যাবে, তত এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্র: কী রকম সর্বনাশ?
আজাদ: আমাকে বলুন তো হেলিকপ্টার শটটা কী? আপার কাট কী? সুইচ হিটটাই বা কী? ক্রিকেটের কোন ব্যাকরণে আছে? আপনি ফর্ম্যাট বদলাতে পারেন একটা খেলার, কিন্তু কোনও দিন ব্যাকরণ বদলাতে পারবেন না। ভাষার ব্যাকরণ যেমন বদলানো যায় না, ‘আই ইজ’ যেমন বলা যায় না, ‘আই অ্যাম’ বলতে হয়, ঠিক তেমনই ক্রিকেটের মূল ব্যাকরণটা একই থাকে। আইপিএল ব্যাকরণটাই বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন সব শট খেলা হচ্ছে, যা টিভিতে দেখে বাচ্চাদের মনে হতে পারে ক্রিকেটটা বোধহয় এ ভাবে খেলতে হয়। সর্বনাশটা এখানেই।
প্র: বাচ্চারা তো টিভিতে দেখবেই। সবাই ধোনির মতো হেলিকপ্টার শট বা সহবাগের মতো আপারকাট মারতে চাইবে। প্রতিকার কী?
আজাদ: কী বলছেন? কপিল টেস্টে পাঁচ হাজারের উপর রান করেছিল। আজ খেললে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বলে বলে ৩০ বলে ৬০ করত। কিন্তু তার জন্য ব্যাকরণ ভেঙে হেলিকপ্টার শট বা সুইচ হিট মারতে হত না। কপিল ছাড়ুন। সদ্য অবসর নিয়েছে ছেলেটা। রাহুলের আগের দিনের ইনিংসটা দেখলেন? ২৪ বলে ৪২, তাতে কিন্তু হেলিকপ্টার শট বা আপারকাট নেই। সব ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে খেলা। ওটা মানতেই হবে।
পঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কী করেছে জানেন তো? আমাদের এখানে নিয়ম হয়ে গিয়েছে, পিসিএ-র কোনও অনূর্ধ্ব ২১ ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি খেলতে পারবে না। একেবারে নিষিদ্ধ। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে বাঁচাতে গেলে এ ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু পিসিএ করলে তো হবে না। গোটা দেশকে করতে হবে। সেটার কোনও লক্ষণ নেই।
প্র: আপনি তো বোর্ডকে চিঠি লিখে এ সব বলতে পারেন?
আজাদ: আমি বললে বোর্ড শুনবে? সচিনের কোচ রমাকান্ত আচরেকর দ্রোণাচার্য, আমিও তাই। কোনও দিন শুনেছেন, বোর্ড আমাদের ডেকেছে বা পরামর্শ চেয়েছে?
প্র: এই বয়সেও কোচিং করে যাচ্ছেন। ক্লান্ত লাগে না?
আজাদ: নাহ, এই খেলাটাকে ভালবাসলে এটা থেকে দূরে থাকা যায় না। আমার তো ইচ্ছে, কোচিং করতে করতে যেন মারা যাই। |