ফের ছন্দহীন পুণে এ বার নেমে গেল কেকেআরেরও নীচে
‘গেমচেঞ্জার’। ইংরেজি অভিব্যক্তিটা দিনভর ব্যবহার হল চ্যানেল, ওয়েবসাইট আর রেডিয়োয়। অগ্নি ফাইভ ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ সম্পর্কে।
রাতের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামেই বা অভিব্যক্তিটা ব্যবহার করা যাবে না কেন? ‘গেমচেঞ্জার’ তো তাকেই বলে যে বস্তু বা মানুষ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তা সৌরভ বনাম ধোনি শেষ মহাযুদ্ধে মোড় ঘুরিয়ে দিল চেন্নাইওয়ালাদের ফিল্ডিং। আউটফিল্ডে তিনটে দুর্ধর্ষ ডাইভিং ক্যাচ ধরেছে সিএসকে! পাশাপাশি পুণে ছেড়েছে চারটে সুযোগ। দু’টো স্টাম্পিং মিস। দু’টো ক্যাচ। এই অবধি পৌঁছে যদি কেউ ম্যাচ রিপোর্ট পড়া থামিয়ে দেন, তিনি অন্তত মূল সংক্ষিপ্তসার জেনে গেলেন!
সৌরভ বনাম ধোনি শেষ মহাযুদ্ধ লিখলাম এ জন্য যে সেমিফাইনাল বা ফাইনালে দেখা না হলে আর কখনও সাক্ষাতের সুযোগ নেই। সৌরভের ফিল্ডিং মান যেখানে পৌঁছেছে, এ বারের আইপিএলেই তাঁর শেষ করা উচিত সম্মানের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে অন্তত চেন্নাই দুর্গে তো আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকল না। এমনিতে চিপক পাড়ার মাঠটা অধিনায়ক সৌরভের সবচেয়ে গর্বের মখমল। স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া এখানেই থামিয়েছিলেন। কিন্তু আইপিএলে এক বারও জিতে ফিরতে পারলেন না।
একে তো একপেশে ম্যাচ হার। ফিল্ডিংয়ে পুণের সেই এনার্জির তুফান আগাগোড়া অনুপস্থিত থাকা। তার ওপর ব্যাটিং-বোলিং সব কিছুই কেমন জড়িয়ে যাওয়া। বারবার মনে হচ্ছিল পরশুর মর্মান্তিক হারের শোক কাটেনি। দল নির্বাচনও ঠিক হয়নি। অশোক দিন্দার পরিবর্ত হিসাবে যে বিদেশি কোনও পেসার খেলানো উচিত ছিল, বার বার প্রমাণ হল। একে নীল জার্সি পরা ফিল্ডারদের এমন হরির লুঠ অপচয় করা। তার ওপর ভুবনেশ্বর কুমারের তিন ওভারে ৩৭ রান দেওয়া। যত বার পুণে রান তোলার গতিতে গিয়ার দিল, তত আচমকা অ্যাক্সিলেটরে গতি বেড়ে গেল সিএসকে-র। প্রথম উইকেটে ১১৬ রান তুলে ম্যাচের যে প্রথম আবর্তটা তৈরি করে যান দু’প্লেসি এবং বদ্রিনাথ। সেটাই থেকে যায় অন্তিম আবর্ত। পুণে কখনও আবর্ত তৈরি করতে পারেনি।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আজকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নন। সম্ভবত বিবেচনাতেও আসেননি। কিন্তু কোথাও তাঁকে নীরব অভিবাদন করা ছাড়া উপায় নেই। হ্যামস্ট্রিংয়ের অসহ্য চোট অগ্রাহ্য করে ধোনি দুর্দান্ত ব্যাট করলেন। ১২ বলে অপরাজিত ২৮ রানটা কম, গুরুত্বে অসীম মূল্যবান। ঋদ্ধিমান দলে থাকা সত্ত্বেও ধোনি সারাক্ষণ কিপিং করলেন। সিঙ্গলস আটকাবার জন্য পনেরো-কুড়ি গজি স্প্রিন্ট। পরের ম্যাচ যদি না-ও খেলেন, আজকের প্রদর্শন অতিমানবীয়। তাঁদের ইনিংসের শেষ তিন ওভারে যখন রান ওঠার গতি হ্যাঁচকা বাড়াতেই হবে, নিয়ন্ত্রিত বোলিংকে কী জবাই না করলেন! এই হ্যামস্ট্রিং নিয়ে কী করে মানুষ হেলিকপ্টার শট খেলে! কী করে স্টেডিয়ামের টংয়ে বল তুলে দেয়! কী ভাবে যন্ত্রনাকাতর কুঁচকি বিস্মৃত করে ইয়র্কারে চার মারে!
যে ভাবে হাতছাড়া ম্যাচ। বল আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় পুণে নেতা সৌরভ। ছবি: পিটিআই
এই জিজ্ঞাসার যেমন নিষ্পত্তি হল না, তেমনই মীমাংসিত হল না এন শ্রীনিবাসন সত্যিই মাঠে আসেননি? ইডেনের মতো নয়। এখানে প্রেসবক্স প্যাভিলিয়নের উল্টো দিকে। ও দিকে কারা বসছে টিভি না দেখালে বোঝা অসম্ভব। মোবাইলে খবর নেওয়া যেতে পারে অবশ্য। আর ফোনে জানা গেল, শ্রীনিবাসনকে কেউ দেখেননি। তিনি নাকি ইদানিং চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে প্রকাশ্য দূরত্ব রাখছেন। বোর্ড প্রধান সত্ত্বার সঙ্গে টিম মালিক সত্ত্বা যোগ হয়ে যাতে ঝকমারিতে না পড়েন।
অথচ মাঠে না এসেও মাঠে তাঁরই ছায়া। ধোনি যে এত বড় চোট অগ্রাহ্য করে খেললেন, জনশ্রুতি হল স্রেফ শ্রীনিবাসনের স্বার্থরক্ষার্থে। বকলমে নিজের অধিনায়কত্ব বাঁচাতে। শেষ তিন ওভারে ১২ রান করে তুললেও পুণে জিতে যেত। এর চেয়ে অনেক কঠিন টার্গেট তাড়া করে যে জেতা যায়, আগের ম্যাচেই গেইলের আরসিবি তাদের দেখিয়েছে। ধোনি তার পুনরাবৃত্তি হতে দিলেন না ফিল্ডিং-রত্ন সমৃদ্ধ দলের সফল নেতৃত্ব দিয়ে। হলুদ জার্সি ঝলমল করল গোটা মাঠ জুড়ে। সেটা অবশ্য ছুটকো দিক। আসল হল ভারতীয় অধিনায়কত্ব রক্ষার্থে এমনই টেনশনে আছেন ধোনি যে কোনও মূল্যে শ্রীনিবাসনকে তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতেই হবে। পয়েন্ট তালিকায় কেকেআর প্রথম উঠে এল পুণের আগে এটা যদি বিস্ময়কর হয়, তার পাশেই রাখা যাক আজ জিতেও ধোনিদের পুণে-র পিছনে থাকা।
এ দিনের ধোনি যদি শ্রীনিবাসনের ছায়ার সঙ্গে সমঝোতা হন। তা হলে ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াইকারী ছিলেন বিপক্ষের এক জন। ২৬ বলে ২৪ করা সৌরভ নন। ইনি অন্য লোক আশিস নেহরা। বিশ্বকাপের পর টানা এক বছর দলের বাইরে নেহরা। এই সময়ের মধ্যে মোট ১৬জন পেসার দেশের হয়ে খেলেছেন। নেহরার কথায়, “আমি কি দেশের প্রথম ১৬ পেসারের মধ্যেও পড়ি না?” আসলে বিশ্বকাপের পর নেহরার করা একটা মন্তব্যে বোর্ড প্রধান এত ক্ষুব্ধ যে, শোনা যায় তাঁর নির্দেশে নির্বাচকেরা বাঁ-হাতি পেসারকে বাইরে রেখেছেন।
নেহরা বলেছিলেন, “বোর্ড সবাইকে সঙ্গে ডাক্তার দিয়ে চোট সারাতে পাঠায়। আমার বেলা আমি একা দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছি কেন? অন্যদের ইজ্জত আছে। আমার নেই?”
বেঙ্গালুরু ম্যাচ শেষ বলে হারানোর পর লক্ষ্মীবারে নেহরার যুগ্মযুদ্ধ ছিল। মর্যাদা পুনরুদ্ধার। বল হাতে সিএসকে-কে আঘাতের মাধ্যমে শ্রীনিবাসনকে আঘাত করা। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ২ উইকেট তুললেন নেহরা। স্টিভ স্মিথ আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ওভারে ১২ করে তুলতে পারলে নেহরাই হয়তো হয়ে যেতেন ম্যাচ সেরা। সিএসকে-র পোষ্যপুত্র সুরেশ রায়নাকে তিনি আউটও করলেন শিক্ষানবীশী ক্রিকেটারে নামিয়ে এনে।
কিন্তু বদলা হল কোথায়? হেরো টিম আর তার প্লেয়ারের তো বলার উপায় থাকে না যে, প্রতিহিংসা নিতে পেরেছি! তাদের কথা শুনছে কে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.