পার্টি কংগ্রেস এবং তার আগে রাজ্য সম্মেলনের ‘ধারা’ অব্যাহত রেখে আগামী রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠনে বিশেষ রদবদল করছে না সিপিএম। বয়স এবং অসুস্থতার কারণে হাতে-গোনা কয়েক জনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা। তাঁদের জায়গায় আসছে কিছু নতুন মুখ। ফলে রাজ্য নেতৃত্বের ‘ভারসাম্যে’ বিশেষ কোনও প্রভাব পড়ছে না বলেই দলীয় সূত্রের খবর।
দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের দুই ‘শক্ত ঘাঁটি’ পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল একই ‘সূত্র’ মেনে চলছে। কেরলে নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে তিন নতুন সদস্য এসেছেন। আলিমুদ্দিন রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছে আগামী ২৮ ও ২৯ এপ্রিল। সেখানেই নতুন সম্পাদকমণ্ডলী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ‘নতুন মুখ’ হিসাবে দলের অন্দরে বিবেচনায় রয়েছেন দুই জেলা সম্পাদক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুজন চক্রবর্তী ও বাঁকুড়ার অমিয় পাত্র। সংখ্যালঘু বা মহিলা নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তিরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত। তবে রাজ্য নেতৃত্বের পরিচিত মুখেরা প্রায় সকলেই থাকছেন।
একই রকম হয়েছে কেরলে। তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য কমিটির বৈঠকে গঠিত ১৫ সদস্যের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন মুখ তিন দুই প্রাক্তন মন্ত্রী এলামালাম করিম এবং পি কে শ্রীমতি। সঙ্গে উঠতি নেতা বেবি জন। বয়সজনিত কারণে বাদ গিয়েছেন টি শিবদাস মেনন ও পাল্লোলি মহম্মদ কুট্টি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পলিটব্যুরোয় যাওয়ায় রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে ‘অব্যাহতি’ নিয়েছেন এম এ বেবি। দলের অন্দরে তিনি জানিয়েছেন, পলিটব্যুরোর সদস্য হিসাবে তাঁকে এ কে জি ভবনের পার্টি কেন্দ্রে গিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। ফলে তাঁকে প্রায়শই দিল্লি যাতায়াত করতে হবে। ঘনিষ্ঠমহলে বেবির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে যোগ দিতে তাঁর বাধা নেই। কিন্তু সেজন্য একটা জায়গা ‘আটকে’ রাখা অর্থহীন। কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য জানাচ্ছেন, এম এ বেবির জায়গায় ত্রিশূর জেলার সম্পাদক বেবি জন নতুন সদস্য হিসাবে সম্পাদকমন্ডলীতে এসেছেন।
কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত ভাবেই সম্পাদকমন্ডলীতে রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের পাল্লা ভারী। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য সব গোষ্ঠীর মধ্যে ‘ভারসাম্য’ রেখেই এগোতে চান। চার বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খাওয়া শুরু হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের সদস্যবৃদ্ধি রাজ্য সম্মেলনে প্রশংসিত হয়েছিল। সুজনবাবু ওই জেলার সম্পাদক হন আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপেই। বিমানবাবুরা চান, জেলায় তাঁর কাজের ‘স্বীকৃতি’ হিসাবে এ বার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে তাঁর জায়গা হোক। বাঁকুড়ায় অমিয়বাবুর নেতৃত্বে জেলা সিপিএম মাওবাদী ও তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র মোকাবিলা করেছে এবং নতুন স্লোগান তুলে আনার ক্ষেত্রে ‘অবদান’ রেখেছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক হিসাবে অমিতাভ বসু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন। এখন গৌতম দেব জেলা সম্পাদক। যিনি সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। দলের একটি বড় অংশ চায়, বয়সের কারণে অমিতাভবাবু ‘অব্যাহতি’ নিলে তাঁর জায়গায় অমিয়বাবুকে আনা হোক।
বয়সজনিত কারণেই বিনয় কোঙার এ বার রাজ্য কমিটিতে নেই। স্বভাবতই তাঁর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকার কথা নয়। সেই জায়গায় আসার সম্ভাবনা সুজনবাবুর। ঘটনাচক্রে, সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে বিনয়বাবু দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলকাতার জেলা সম্পাদক রঘুনাথ কুশারীকে সম্পাদকমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি (ওই জেলা থেকে রবীন দেব আছেন) দিয়ে দলের একাংশ চায়, মইনুল হাসানের মতো সংখ্যালঘু মুখকে আনা হোক। মইনুলের রাজ্যসভার মেয়াদ এ বারই ফুরিয়েছে। দলের অন্য অংশ চায়, ওই জায়গায় কোনও মহিলা সদস্যকে নেওয়া হোক।
তবে কেরলে একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ ঘটনা ঘটেছে। সম্পাদকমণ্ডলীর জন্য প্রাক্তন মন্ত্রী জি সুধাকরনের নাম প্রস্তাব করেন রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন। কিন্তু সুধাকরন প্রস্তাব ‘সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান’ করে বলেন, রাজ্য কমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করতে পেরেই তিনি ‘তৃপ্ত’। দলের একাংশের মতে, ‘ক্ষমতার দৌড়ের রাজনীতি’তে এমন ঘটনা বিরল। |